হোম অর্থ ও বাণিজ্য চামড়া খাতের রফতানি আয় কি ১২.৫ বিলিয়ন ডলারে নেয়া সম্ভব?

বাণিজ্য ডেস্ক:

চামড়া খাতে বছরে রফতানি আয় সোয়া বিলিয়ন ডলার। এ আয় ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা পরিবেশ দূষণ।

চামড়া শিল্পের ভয়াবহ দূষণের শিকার যখন পরিবেশ তখনও এক স্বপ্নময় পথ পাড়ি দিতে চান এই খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে যদি অন্তত ২০টি ট্যানারি এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ) সার্টিফাইড হতে পারে, তাহলে আমরা মনে করি, ২০৩০ সালের মধ্যে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।’

আগামী সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে চামড়া শিল্পের রফতানি আয়কে ১০ গুণ করার হিসাব দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। অথচ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, এখনও সোয়া এক বিলিয়ন ডলারের দাগই পার করতে পারেননি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

বাজার না ধরতে পারার বিষয়ে এমবি ট্যানারি লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ রিন্টু বলেন, ‘আগে এশিয়ার বাজারের মধ্যে আমরা অনেক এগিয়ে ব্যবসা করতাম। বর্তমানে আমরা অনেক পিছিয়ে আসছি। সত্যি বলতে, আমরা একদমই পরিবেশবান্ধব নই। আর ইউরোপের ক্রেতারা তো এগুলো দেখছে। এমন তো না যে তারা এগুলো দেখছে না। এরকম পরিবেশ দেখে তারা কিভাবে আমাদের থেকে পণ্য নেবে। তারা আমাদের থেকে পুরোপুরি বিমুখ। তারা বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রকার চামড়া নিতে আগ্রহী নয়।’

যে পরিবেশ দূষণের কারণে বাড়ছে না রফতানি আয়; সেই পরিবেশের সুরক্ষা দিতেই ২০১৭ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে হাজারীবাগে বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে চামড়া শিল্পকে সাভারে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে ৭ বছর পরও কেন যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য?

এ প্রশ্নের জবাবে, পুরোপুরি দূষণমুক্ত শিল্প চাওয়াটা ঠিক না মন্তব্য করে বিসিকের চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, শিল্প করলে কিছু দূষণ হবেই। সেক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে, আমরা দূষণ থেকে কতটুকু পশমিত করতে পারছি। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ও আমাদের সম্পূর্ণ উদ্যোগ রয়েছে।

তবে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বিটিএ’র অভিযোগ, বিসিকের অক্ষমতাতেই পরিবেশবান্ধব সনদ মিলছে না। ফলে বাড়ছে না বাজার।

বিটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বিধিমালা নেই। যে পর্যন্ত এই বিধিমালা না হবে সেই পর্যন্ত চামড়া শিল্পের ধস বন্ধ করা যাবে না। আগামীতে তা আরও বেশি হবে। বিসিক এই শিল্প করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিত।’

এ অবস্থায় বিসিকের উল্টো কথা। তারা বলছে, দায় চাপিয়ে সুফল মিলবে না, উদ্যোক্তাদেরই দায়িত্ববান হতে হবে।

বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যখন কেউ একটি ব্যবসা বা কাজ করবে, তখন তার কিছু দায় ও দায়িত্ব বহন করতে হবে। অন্য কেউ এই কাজটি করে দিতে পারবে না। সেই ক্ষেত্রে এখানে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যারা চামড়া শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বড় বড় ট্যানারিতে কাজ করছেন, তাদের নিজেদেরই তাদের ওপর থাকা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। অর্থাৎ, বিধিমালা বলতে যা বুঝায়, তারা যদি সেটি মানত বা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করত, তাহলে এই চামড়া শিল্পের চেহারাই বদলে যেত।

সবশেষ তথ্য বলছে, প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করা তৈরি পোশাক খাতের পর চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিমুখী খাত।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন