জয়দেব চক্রবর্ত্তী , কেশবপুর (যশোর) :
যশোরের কেশবপুরে পানিনিষ্কাশনের সরকারি খালগুলি মাছের ঘের মালিকরা অবৈধভাবে দখলে রাখা ও শুষ্ক মৌসুমে ঘের মালিকরা শত শত বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ও স্যালোমেশিন দিয়ে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ করার প্রস্তুতি নেয়ায় অশাল পনিবদ্ধতার হাতছানি দিচ্ছে। ফলে বিল এলাকার মানুষ বর্ষা মৌসুমে বাড়ি ঘর ছাড়তে বাধ্য হবেন এমনটিই মনে করছেন বিল এলাকার কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির সাথে অতিরিক্ত পানি উপচে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও সরকারিখাল অবৈধ দখল মুক্ত করার বিধিনিষেধ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বরাবরের ন্যেয় বলেছেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর বাগডাঙ্গা গস্খামবাসি স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, বাগডাঙ্গা গস্খামের দক্ষিণপাড়া পাকা রাস্থার পাশ দিয়ে যাওয়া ব্যক্তিমালিকানাধীন খাল রয়েছে এ খালটি জমির মালিকরা লীজ না দিলেও এবং কোন হারির টাকা না নিলেও সংশ্লিষ্ট ঘের মালিক জবর দখলে নিয়ে তার মাছের ঘেরের ভেড়ি দিয়ে আটকিয়ে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি করে চলেছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ঘের মালিক প্রভাবশারী হওয়ায় স্ধাারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে ও প্রতিকার পাচ্ছে না। এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে তিনি বিষয়টি দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপারিশ করেছেন।
ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে ফেলে। এরপরও তারা মাছ চাষের জন্যে শুষ্ক মওসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করে। ফলে বর্ষাকালে যেনতেন বৃষ্টিতেই পানি মানুষের বসত ভিটায় উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা।
বাগডাঙ্গা গ্রামের অনাথ বন্ধু সরকার, মিহির সরকার জানান, নদী অববাহিকার ঘের মালিকরা মৎস্য ঘেরে লোনা পানি ওঠাচ্ছে। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া ঘের মালিকরা ট্রাক্টরসহ অন্যান্য গাড়ি ব্যবহার করে বিল অভ্যন্তরের অধিকাংশ রাস্তা নষ্ট করছে। যে কারণে পূর্বাঞ্চালের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, কালিচরণপুরসহ ১৫টি গ্রাম কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জনগণ প্রায় সারা বছর পানিবন্দী থাকে। অনেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা জানান, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬‘শ ৫৮টি মৎস্য ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে চাষযোগ্য সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ্যে ঘের মালিকরা ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে। আবার ১৫ বৈশাখের পর অবৈধভাবে ঘেরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পানিতে ভরে ফেলে। তিনি অভিযোগ করেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষের কোন সুযোগ নেই। এছাড়া, ঘের মালিকরা ৫৯ টি সরকারি খালের ৩৯৪ হেক্টর জমি দখল করে মাছ চাষ করছে।
যশোর বিএডিসির সহকারি প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্যে কেশবপুরে ১৫‘শ কৃষকের সেচ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সরকার কৃষি কাজে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষক শুধুমাত্র কৃষি কাজ ছাড়া অন্যকোন কাজে সেচ পাম্প ব্যবহার করতে পারবে না। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কেশবপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল লতিফ বলেন, সমিতির আওতায় কেশবপুরে বিদ্যুতের সেচ সংযোগ রয়েছে ২ হাজার ৫০টি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে তার দপ্তরে পত্র দিয়েছে। যেসব কৃষক সেকেন্ড ব্লক করবে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। যদি সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় তাহলে ট্রান্সফরমার চুরির সম্ভাবনা থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, প্রশাসনিকভাবে সব দপ্তরকে সমন্বয় করে যারা অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করে মাছ চাষসহ কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়ার সবরকম সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মৎস্য ঘের মালিকরা মাছ চাষ করছে। সরকার কৃষি কাজের জন্যে বিদ্যুৎ সংযোগসহ ভর্তুকি দিচ্ছে। যারা অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে আইগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
ঘের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, যারা চারা মাছ উৎপাদন করে তারা ঘেরে পানি উত্তোলন করছে। কিন্তু খাল দখলসহ পানি উত্তোলন করে যারা ঘের ভরাট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে বলার কিছুই নেই।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফুজ্জামান বলেন, যারা সরকারি খাল দখল করে রেখেছে তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত খাল দখলমুক্তসহ পানি নিষ্কাশনের জন্যে উন্মুক্ত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারীদের ব্যাপারে মাসিক সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি খাল দখলমুক্ত করার জন্যে অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।