আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে পুরো ভবন মিশে গেছে মাটিতে। ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে তিনি যা দেখলেন, তাতে কোনো ভুল ছিল না। সেখানেই ধুলোয় মিশানো শিশু সন্তানের পায়জামা হাতে নিয়ে স্মৃতিতে ভেসে গেলেন গাজার বাসিন্দা খলিল খাদের। পায়জামাটি শিশু রোজার। ১৮ মাস বয়সী মেয়ে শিশুটি ছিল পরিবারের সবার আদরের।
খলিল তার ফোনে থাকা একটি ভিডিও দেখিয়েছেন বিবিসির একজন সাংবাদিককে। যেখানে নীল রঙের একটি পোশাক পরা অবস্থায় রোজাকে দেখা যায় তার বড় ভাই-বোনদের হাত ধরে থাকতে।
ভিডিওটি ধীর গতিতে ধারণ করায়, দেখলে মনে হবে শিশুরা হালকা বাতাসে দুলছে, তারা হাসছে, একসঙ্গে খেলছে। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের জীবনে যেন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
খলিল শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। বয়স ৩৬। রাফাহ শহরের আল-নাজ্জার হাসপাতালের কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।
চার সন্তানের বাবা খলিল। তারা হলো- ৯ বছরের ইব্রাহিম, ৫ বছরের অমল, কিনানের বয়স আড়াই এবং রোজা, যার বয়স ১৮ মাস।
হাসপাতাল থেকে খলিলের বাসা মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। তিনি ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে সাবধানে পা বাড়ালেন। যেখানে পড়ে আছে গৃহস্থালীর অনেক জিনিসপত্র ও শিশুদের খেলনাসহ অনেক কিছু।
২০ অক্টোবরের রাতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই রাতে খলিল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে বিবিসির সাংবাদিককে তিনি জানান, এখানে একটি ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘হামলার পর প্রতিবেশীরা হাসপাতালে আসছে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় বোমা হামলা হয়েছে? তারা বললেন, এটা তোমার বাড়ির আশপাশে ছিল। তখনই আমি পরিবারের খোঁজ নেয়ার জন্য বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ফোন করার চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন (সাংবাদিকের উদ্দেশে)… পুরো বাড়ি বোমায় বিস্ফোরিত হয়েছে।’
এই বিস্ফোরণে খলিলের চার সন্তানসহ পরিবারের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত অন্যরা হলেন- তার দুই বোন, ৭০ বছর বয়সী বাবা, ভাই, শ্যালিকা এবং শ্যালিকার দুই মেয়ে। হাসপাতাল প্রাঙ্গনে সাদা কাফনে মোড়ানো তাদের মরদেহও দেখা যায়।
বিস্ফোরণে খলিলের স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন।
সন্তানদের স্মৃতিচারণ করে খলিল বলেন, ‘সব সন্তানকে নিয়ে আমার স্বপ্ন ছিল। ইব্রাহিম স্কুলে ফার্স্টবয় ছিল। তাকে আমি ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। অমল খুব সৃজনশীল ছিল, সে আঁকতে পছন্দ করত এবং আমাকে তার আঁকা দেখাত। আমিও মাঝে মাঝে তার সঙ্গে আঁকতাম। কিনান খুব চতুর ছিল-পরিবারের সবাই তাকে ভালবাসত। সে তার ছোট বোনের যত্ন নিত। তবে এখন তারা সবাই চলে গেছে।’