হোম জাতীয় কোরবানির ঈদে সরগরম ’চুইঝাল’ বাজার

জাতীয় ডেস্ক:

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে বাড়ছে চুইঝালের চাহিদা। ভিড় বাড়ছে চুইঝালের দোকানগুলোতে। এতে বাড়ছে দামও। কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

বুধবার (২৮ জুন) বাগেরহাটের বাজারগুলো ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে গরুর মাংসের সাদ বাড়াতে ‘চুইঝাল অন্যতম একটি মসলা। আর চুইঝাল বিক্রির প্রধান মৌসুম কোরবানির ঈদ। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রি হলেও বর্তমানে চুইঝাল আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে চুইঝাল বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও কোরবানি উপলক্ষে মোটামোটি বিক্রি হচ্ছে। বছরের প্রায় সব সময় চুইঝাল বিক্রি হয়। তবে কোরবানির সময় মাংসের স্বাদ বাড়াতে মানুষ চুইঝাল বেশি কিনে থাকে। যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চুইঝালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

রুহুল আমিন আরও জানান, আগে চিকন (আকারে ছোট) চুইঝাল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হত। কিন্তু কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারিতে দাম বেড়েছে। তাই চুইঝাল আকারভেদে কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এক কেজি মাংসে ১০০ গ্রাম চুইঝাল রান্না করা হয়ে থাকে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার চুইঝাল চাষি আজিজুর রহমান বলেন, চুইঝাল মূলত একটি লতাগুল্ম গাছের শিকড় ও কাণ্ড। একটি গাছ থেকে পরিণত চুইঝাল সংগ্রহ করতে হলে গাছটি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ বড় হতে প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগে। সেই জন্য চুইঝালের দাম কিছুটা বেশি। কোরবানি উপলক্ষে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে, পরিণত গাছের পরিমাণ কম থাকায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যবসায়ী তালিম হোসেন জানান, সাধারণত দৈনিক ৫ থেকে ১০ কেজি চুইঝাল বিক্রি হয়। কিন্ত ঈদের সময় চাহিদা বাড়ায় এখন দৈনিক প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি চুইঝাল বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বাড়লে অপরিপক্ক গাছ কেটে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন পাইকাররা। তার প্রভাবেই ঈদের সময় চুইঝালের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

চুইঝাল ত্রেতা সাইফুল বলেন, চুইঝাল ছাড়া গরুর মাংসের স্বাদের পূর্নতা পায় না। তাই ঈদের দিন গরুর মাংস রান্নার জন্য ৩০০ গ্রাম চুইঝাল ৩৬০টাকায় কিনেছি।

আরেক ক্রেতা সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা শুধু গরুর মাংস না, সবধরনের মাংস ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল ব্যবহার করি। কোরবানি উপলক্ষে পণ্যটির দাম কিছুটা বেড়েছে।’

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময়ে চুইঝালের কদর বেড়ে যায়। গত বছরের চেয়ে এবার ৫ হেক্টর বেড়ে জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করে প্রায় ৪০ টন চুইঝাল উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য দুই কোটির টাকার ওপরে। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে বাগেরহাটে দিন দিন চুইঝালের চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় জনপ্রিয় একটি খাবার হলো চুইঝাল। বর্তমানে দেশের অন্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো, দেখতে সবুজ রঙের।

এ ছাড়া চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। বলা হয়, চুইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল- ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। রান্নার জন্যে চুইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন