হোম ফিচার কেশবপুরের ভরত রাজার দেউল হয়ে উঠতে পারে ভিন্ন মাত্রার পর্যটন কেন্দ্র

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর) :

যশোরের কেশবপুরের ভরতের দেউল পর্যটকদের জন্য একটি দর্শণীয় স্থান। সরকারি উদ্যোগ নিলে ভ্রমন পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম এ দেউলটি।

কেশবপুর উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল অবস্থিত। রাজা দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী রানী কৈকেয়ীর গর্ভজাত পুত্র ভরত রাজার নাম অনুসারে ভরতের দেউল নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

খুলনা ও যশোর জেলার সীমান্তে কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন যুগের অনেক নিদর্শন নিয়ে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতিক হিসাবে কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রায় আঠারো’শ বছর আগে থেকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ভরত রাজার এই দেউল। অনেকটা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো দেখতে এই প্রত্মতত্ত্ব নিদর্শনটি। উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিন ভ্যান অথবা ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল যোগে অনায়াশে পৌছানো যায় এই দেউলে।

খ্রিষ্টীয় ২য় শতকে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী তৎকালীন সরকার এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালায়। খননের ফলে দেউলের পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে। বর্তমান দৃশ্যমানেও যার উচ্চতা ৫০ ফুটের উপরে। ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট পাদদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। এর প্রথম অংশে বিভিন্ন আকারের স্থাপনা, দ্বিতীয় অংশে একটি মঞ্চ, তৃতীয় অংশে মূল মন্দির। খননের ফলে দেউলের ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত ৯৪ টি কক্ষ দেখা যায়। স্থাপনাটির ৪ পার্শ্বে বর্ধিত আকারে ১২ টি কক্ষ অনুমান করা যায়। বাকী ৮২ টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির চূড়ায় ৪টি কক্ষ এবং পার্শ্বে ৮ টি কক্ষ রয়েছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে ৪ পার্শ্বে ৩ মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। খনন কালের মধ্যে পোড়া মাটির তৈরী নারীর মুখমন্ডল, দেবদেবীর নৃত্যের দৃশ্য সম্বলিত টেরাকোটার ভগ্নাংশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এ যাবত প্রাপ্ত টেরাকোটার মধ্যে এটি বৃহৎ আকৃতির। তাছাড়া নকশা করা ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তি পাওয়া যায়।

এ অঞ্চলে অন্য কোন পুরাকীর্তিতে এত বড় আকারের ইট ব্যবহৃত হয়নি। এসব নকশা করা ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তির ভগ্নাংশ সমুহ সাগরদাঁড়ী মধুপল্লীর প্রত্মতত্ত্ব বিভাগে সংরক্ষিত রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ভরত রাজার দেউল হতে পারে ভিন্ন মাত্রার পযর্টনকেন্দ্র।

এছাড়াও কেশবপুর উপজেলা বিভিন্ন দিক দিয়ে সু-প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। এখানে কবি সাহিত্যিক নবাবের বসত বাড়ী মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভুমি মির্জানগর হাম্মামখানা সহ জমিদার ও রাজাদের রাজত্বের অনেক দর্শনীয় স্থান। সুযোগ পেলেই যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন এই পর্যটনের লীলাভুমি।

এবিষয়ে খুলনা বিভাগীয় প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের রিজিওনাল ডাইরেক্টর (আরডি) আফরোজা খান মিতা বলেন, পুরাকীর্তি হিসাবে ওই দেউলকে সরকারি ভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সেনিটেশন ব্যবস্থাসহ দেউলকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার চিন্তা রয়েছে। চলো না ঘুরে আসি অজানাতে! অনুসন্ধানী মনের জানালা খুলতে বা ভ্রমণ পিপাসু মনের ক্ষুধা মেটাতে আমরা সবাই প্রতি বছর কোনো না কোনো দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে বের হই। ভ্রমন যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে তারা পাখা মেলে উড়িয়ে দেন মনের পর্যটক সত্ত্বাকে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন