ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
মাহামারি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করার পর থেকে নানা উপসর্গ নিয়ে একাত্তর টিভির বাগেরহাটের স্টাপ রিপোর্টার বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী এখনো অসুস্থ। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত শরীরে নানা ধরণের উপসর্গের সাথে লড়াই করছেন ওই সাংবাদিক। তাঁর সমস্ত শরীরেই যেন ভ্যাকসিনের প্রভাব পড়েছে। ভ্যাকসিনের কারণে ৩২ মাস ধরে বিষ্ণু প্রসাদ অসুস্থ। সেই থেকে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তিনি এখনো সুস্থ হতে পারেনি।
চিকিৎসকরা বলছেন, যে কোন ভ্যাকসিনের পার্শ্বপতিক্রিয়া থাকতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর থেকে সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী অসুস্থ। একারণে তাঁর শরীরে যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। একই সাথে তাঁর অসুস্থতার কেস ফাইন্ডিংস বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে পাঠানো উচিত। চিকিৎসকরা তাঁর শরীরের বর্তমান অবস্থার কারণে পুরনায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফার্ড করেছে। সেই সাথে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। এর ১ঘন্টার মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয় তাঁর শরীরে। জ্বর, বুকেব্যাথা,শ্বাসকষ্ট, মাথায় যন্ত্রনা, গলায়ব্যাথা, মুখ ও গলা সুকিয়ে আসা,কথা বলতে কষ্ট হওয়া,মেমোরিলস, শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পাড়া,চোখে ঝাপসা দেখাসহ নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। এর পর খুলনা ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিউতে তাকে দুই দফা ভর্তি করা হয়। সেখানেও তাঁর অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় এর পর তাকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। একটানা ২১দিন বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন ওই সাংবাদিক। বিএসএমএমইউর ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রফেসর সোহেল মাহমুদ আরাফাতের নেতৃত্বে তাঁর চিকিৎসায় দুই দফায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারেনি।
এর পর সে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইনিস্টিটিউট অব কার্ডিঅ্যাক সাইন্স হাসপাতালে ১ বার, হায়দ্রাবাদে এআইজি হাসপাতালে ২ বার এবং ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে ২ বার চিকিৎসা নেয়। ওই সব হাসপাতালে ৫ দফায় তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সে খানে চিকিৎসকরাও সম্পূর্ণ রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। তবে ওই সব হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে নানা চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। তাতেও সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ সুস্থ হতে পারেনি। এখনো সে নানা উপসর্গের সাথে লড়াই করছে। করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হওয়ার খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বে সাথে ওই সংবাদ প্রকাশা ও প্রচার করে।
অসুস্থ সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী জানান, ভ্যাকসিন গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত আমি একজন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। এর পরেও ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পূর্বে করোনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকায় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি সকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এ্যাসটাজেনেকা ভ্যাকসিন গ্রহণ করি। উদ্বোধনের প্রথম দিন প্রথম যে ৫ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করে ছিল তাঁর মধ্যে আমি একজন। আমাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় আমার সর্ব শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। তখনি বিষয়টি আমি চিকিৎসকদের জানাই। এর ১ ঘন্টার মধ্যে শরীরে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। দিন পার হওয়ার সাথে সাথে শরীরে উপসর্গের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
তিনি আরো জানান, দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও আমি এখনো সুস্থ হতে পারি নাই। সেই থেকে আমি নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ। চলাফেরা করতে আমার কষ্ট হয়। অসংখ্য উপসর্গের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। একের পর এক উপসর্গ সহয্য করে চরম কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। ভ্যাকসিন গ্রহণ করার আগে এবং পরে অসংখ্য বার করোনা পরীক্ষা করেছি। প্রতিবারই রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে। দেশে-বিদেশে নিজের চিকিৎসা করাতে এরিমধ্যে বেশ কয়ে লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তাতেও কোন সুফল পাইনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসরা এবার সিঙ্গাপুর অথবা আমেরিকা যাওয়ার কথা বলছে চিকিৎসকরা।
সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা,মানুষের আর্শিবাদ-দোয়া আর ভালোবাসায় এখনো পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বেঁচে আছে বলে মনে করেন ওই সাংবাদিক।
বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান,সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী এ্যাসটাজেনেকা ভ্যাকিসন গ্রহণ করার ১ ঘন্টার মধ্যে নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পর প্রথমে আমি তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। সেই থেকে বিভিন্ন সময় আমি তাকে নানা ধরণের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। তার শরীরে নানা উপসর্গ রয়েছে। তার অসুস্থতা নিয়ে গবেষণা করা গেলে করোনার অজনা আরো নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বিষ্ণু প্রসাদ নানা অসুস্থতার সাথে লড়াই করছেন। তার মতো একজন খ্যাতিমান সাংবাদিককে বাঁচিয়ে রাখতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের এগিয়ে আসা খুব জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান,যে কোন ভ্যাকসিনে পাশ্বপতিক্রিয়া থাকতে পারে। সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনার ভ্যাকিসন গ্রহণ করার আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর থেকে তার শরীরে একের পর এক উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। সেই থেকে আজও পর্যন্ত বিষ্ণু প্রসাদ অসুস্থ। এরিমধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তবে তারা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। তার রোগ নির্ণয় করতে আরো উন্নত চিকিৎসা করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
তত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার আরো জানান,বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনার ভ্যাকিসন গ্রহণ করার পর থেকে তার শরীরে যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার সদর দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে তার অসুস্থতার কেস ফাইন্ডিংস পাঠানো উচিত। সেই সাথে তার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর অথবা আমেরিকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর এই মুহুত্বে তাকে আবারো ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফার্ড করা হয়েছে।
তার সুস্থতা কামনা করে বিবৃতি প্রদান করেছেন ফকিরহাট সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।