হোম জাতীয় কংক্রিট নয়, দুর্নীতিমুক্ত হলে মাটির বাঁধেই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব

কংক্রিট নয়, দুর্নীতিমুক্ত হলে মাটির বাঁধেই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 49 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত অনেক দেশ মাটির বেড়িবাঁধ দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম হলেও প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে। আর এই ব্যর্থতার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর অনিয়ম-দুর্নীতি আর পেশাদারিত্বের অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, কংক্রিট নয়, আমলাতান্ত্রিক বলয় থেকে মুক্ত করে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করলেই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রভাব বিস্তার করা ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল। সরেজমিন দেখা যায়, সময় যত যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। ভেসে গেছে হাজার হাজার মানুষের বসতঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত এক জীবনের মুখোমুখি রেমালকবলিত কোটি মানুষ।

দেশের বাস্তবতায় ঘূর্ণিঝড় নতুন কিছু নয়। উপকূলবাসীও মানিয়ে নিয়েছেন প্রতিকূল এই পরিবেশের সঙ্গে। প্রশ্ন ওঠে: সবকিছু জানা থাকলেও কেন এত ক্ষয়ক্ষতি? এর উত্তরে সামনে আসে বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গ। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেই ঘূর্ণিঝড় রূপ নেয় মহাধ্বংসযজ্ঞে।

সরকারি খণ্ডিত হিসাবে বলা হচ্ছে, রেমালের আঘাতে উপকূলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। যদিও বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে। ভুক্তভোগী মানুষের দাবি: দুর্বল, নিচু ও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এমন ক্ষতির শিকার হতে হয় তাদের। অনেকে কংক্রিটের শক্তিশালী বাঁধের পক্ষে মত দিলেও উন্নত অনেক দেশের তুলনা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির বাঁধেই সম্ভব দুর্যোগ মোকাবিলা।

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, আমেরিকা, হল্যান্ড, বেলজিয়ামে যদি মাটির বাঁধে দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব হয়; আমরা কেন পারব না। এখানে যারা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন তারা অনেক পাকা পান, কিন্তু তার সদ্ব্যবহার হয় না। এখানে হচ্ছে অপেশাদারিত্ব, দুর্নীতি এবং তদারকির অভাব রয়েছে।’

পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীত, ঘুষ এবং অনিয়মের একটি বিশাল প্র্যাকটিস হয়ে থাকে। এ জন্য সুফল মেলে না।

বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে পেশাদারিত্বের অভাব আর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দিয়ে ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘বাঁধটা ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ারের কোনো ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় দুর্যোগকবলিত গ্রামের মানুষগুলোর। তাই ওই লোকগুলোকে দায়িত্ব দিতে হবে তুমি তোমার বাঁধ নির্মাণ কর। সরকার প্রথমবার এটা তৈরি করে দিয়েছে, কিন্তু এখন এটা রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যবস্থাপনা তোমার কাজ। এটা ছাড়া কোনো সমাধান নাই।’

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট ১৬ হাজার ২৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে সাড়ে পাঁচ হাজার বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও ভঙ্গুর।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন