স্বাস্থ্য ডেস্ক :
দেশে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তার থেকেও যেন কয়েকগুণ বেশি সাধারণ মানুষের অসচেতনতা, অজ্ঞতা। স্কুল-কলেজ, গণপরিবহন, বাজার কিংবা শপিং মল কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই।
এ ছাড়া মাঠপর্যায়েও নেই সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালনে তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ। এ অবস্থায় সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি দুই থেকে তিন সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেলা, ধর্মীয় সভাসহ, পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার কথাও বলছেন তারা।
এ হলো অতি সংক্রমণশীল করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন শনাক্তের প্রায় এক মাসের বাংলাদেশ। সব জেনে বুঝেও যেন না দেখার ভান। না শোনার অভিনয় চলছে।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে নানা নির্দেশনা, বিধি-নিষেধ। এখনো চালু রয়েছে নো মাস্ক নো সার্ভিস। অথচ গণপরিবহনের চিত্র বলছে, কাজীর গরু কিতাবেই আছে, বাস্তবে গোয়াল শূন্য।
এবার আসা যাক মাছের বাজারে। হাজারো ক্রেতা, বিক্রেতাও কম নয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবার বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। অথচ সচেতনতার ছিটেফোটাও খুঁজে পাওয়া দায়। কিন্তু কারোই অজানা নয় করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতির বিষয়ে।
মাছের বাজারের বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে যে করোনা আছে সেটা আল্লাহর রহমতে বেশি ক্ষতিকর না।
মাছের বাজারে আসা এক বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রেতা বলেন, শুনছি করোনা আবার বাড়ছে, মাস্ক বাসায় ফেলে এসেছি। গাড়িতে এক বয়োজ্যেষ্ঠ বলেন কাশি হয়েছে তো তাই মাস্ক পরি নাই পরে পরব।
দীর্ঘদিন করোনা সংক্রমণের নিম্নগতি এবং একই সঙ্গে সরকারের ঢিলেঢালা ভাবই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সরকার নানা বিধি-নিষেধের দিকে আগালেও অনেক ক্ষেত্রেই সেসব সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সাংঘর্ষিক আবার অন্যদিকে বিজ্ঞানসম্মত নয়।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ খসরু বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে বয়োজ্যষ্ঠ নাগরিকদের দ্রুত টিকা দেওয়ার পাশাপাশি দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজসহ জনসমাগম স্থান বন্ধ করার পরামর্শ রইল। তিনি বলেন, নির্দেশনাগুলো ভাগ করা দরকার। যে গুলো বিজ্ঞানের আলোকে কঠোর হওয়া দরকার, সেগুলোকে আরও বেশি রূপ দেওয়া দরকার। বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া দরকার।
আইইডিসিআরের এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে তার একটা নিশ্চিতভাবে হলেও ওমিক্রন দিয়ে শনাক্ত হচ্ছে, ওমিক্রন ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করবে এটা স্বাভাবিক। ওমিক্রন হয়তো বাড়ছেও কিন্তু এখনো ডেল্টাকে রিপলেস করতে পারে নাই, ডেল্টাই আমাদের এখানে প্রি-ডমিন্যান্ট।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, আমরা ডাটা যেটা দেখছি, সেটা ২০ জনের শনাক্ত হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে রোগী আছে, সেটা হয়তো আমাদের শনাক্তের মধ্যে নেই।
তবে আক্রান্তের হার বাড়ার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়কে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, স্কুলটা এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে, বৃহৎ জনজট আমাদের হয়ে থাকে সেগুলো আমি আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিতে চাই।
দেশে ভ্যাকিসিনেশন কার্যক্রম সন্তোষজনক উল্লেখ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে গতি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।