হোম আন্তর্জাতিক আমেরিকাকে তালেবানের কঠোর হুঁশিয়ারি, ‘রেড লাইন’ ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

আগস্ট মাসেই আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। তবে এই সময়ের ভেতর সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সম্ভব হবে না। এদিকে বিষয়টি নিয়ে মোটেও নমনীয় নয় তালেবান। তালেবান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী সব মার্কিন সেনাকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করতে হবে, এটা তাদের রেড লাইন।

কাতারে তালেবানের দপ্তরের মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন তথা বিদেশি সেনা প্রত্যাহারে বিলম্বের জন্য আমেরিকাকে মূল্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিলম্ব সহ্য করা হবে না।

মার্কিন কর্মকর্তাদের অনেকেই এরই মধ্যে বলেছেন, আগস্টের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শেষ নাও হতে পারে।

পূর্ব ঘোষিত সময়ের মধ্যে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নাও হতে পারে বলে স্বয়ং জো বাইডেনও রোববার (২২ আগস্ট) ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে মার্কিন সেনাদের আরও বেশি দিন রাখার প্রয়োজন হতে পারে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব মার্কিন সেনার আফগানিস্তান ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ সতর্ক করে বলেছে, যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের সবাইকে স্থানান্তরিত করা পূর্ব ঘোষিত সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়।

কাবুল দখলের পর এখন পুরো আফগানিস্তান বলতে গেলে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের দখলে। ইতিমধ্যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সরকার গঠনেরও ইঙ্গিত দিয়েছে তালেবান। এদিকে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক তালেবান সরকারকে স্বীকৃতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে। এদিকে তালেবানের সরকার গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোমবার (২৩ আগস্ট) ইরানের সংবাদ মাধ্যম পার্সটুডেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার দিয়েছেন গোষ্ঠী রাজনৈতিক মুখপাত্র সোহাইল শাহিন।

সোহাইল শাহিন জানান, তারা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান এবং দেশের সব নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সরকার গঠন করবেন। তালেবান সরকারে শুধুমাত্র পাশতুনদের অংশগ্রহণ থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসলামি সরকার কোনো নৃ-গোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হবে না। আপনি জানেন যে, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশসহ আরও কয়েকটি প্রদেশে তাজিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, ফারিয়া ও সারে পোলের মতো প্রদেশগুলোতে রয়েছে উজবেক জনগোষ্ঠী। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে পাশতুন জনগোষ্ঠী। এরা সবাই আফগানিস্তানের জনগণ এবং তারা ইসলামি সরকারের অংশ হবে।’

সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, ‘তালেবানের নেতৃত্ব একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যাতে আফগান সরকারে সবার অংশগ্রহণ থাকে। সরকারে এবং দেশ পুনর্গঠনে সব নৃ-গোষ্ঠীর অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। সবাই যাতে দেশের জনগণের সেবা করতে পারে সেজন্য অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করা হবে।’

মেয়েদের শিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থান সম্পর্কে সোহাইল শাহীন বলেন, ‘আফগানিস্তানে হাজার হাজার গার্লস স্কুল রয়েছে। সেগুলো চালু আছে। কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে। নারী শিক্ষকরাও তাদের কাজ শুরু করেছেন। ফলে নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রবেশে আমাদের কোনো সমস্যা নেই তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামি হিজাব মানতে হবে। নারীদের অধিকার থাকবে, তবে শুধুমাত্র হিজাব মানার শর্ত থাকবে।’

এর আগে আইনি, ধর্মীয় এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তালেবান নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি করবে বলে জানিয়েছিলেন তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র সোহাইল শাহিন। গত ১৬ আগস্ট শাহিন বলেছেন, আফগানিস্তানে এখন যে সরকার গঠিত হবে তাতে শুধু তালেবান সদস্যরা থাকবেন না বরং সেখানে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নয়া সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র আরও বলেন, এতদিন ধরে আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ সব নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত যে কেউ তার অস্ত্র সমর্পণ করে তালেবানে যোগ দেবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন