হোম জাতীয় ‘অ্যানালগ পদ্ধতিতে লোড ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ করছে জাতীয় গ্রিডকে’

জাতীয় ডেস্ক :

২০১৪ সালের মহাবিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ। এমনটা জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানালগ পদ্ধতিতে লোড ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে জাতীয় গ্রিডকে। উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনায় সুষ্ঠু কারিগরি সমন্বয় নিশ্চিত করার তাগিদ তাদের।

গ্রিড বিপর্যয়ে আরও একবার বিপর্যস্ত দেশের বড় একটি অংশ। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশের ৬০ শতাংশ এলাকা। জাতীয় গ্রিডে মঙ্গলবারের (৪ অক্টোবর) এ বিপর্যয় মনে করিয়ে দেয় ২০১৪ সালের নভেম্বরের মহাবিপর্যয়ের কথা (ব্ল্যাকআউটের ঘটনা)।

সে ঘটনার পর গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। করা হয়েছিল বেশ কিছু সুপারিশও। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এরপরও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা। ২০১৭ সালেও গ্রিড বিপর্যয়ে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩২ জেলা। এমনকি গত মাসেও এক ঘণ্টার বেশি সময় রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল অঞ্চল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকার কারণ গ্রিড বিপর্যয়।

২০১৪ সালের নভেম্বর মহাবিপর্যয়ের পর কারিগরি ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধতা এবং নির্দেশ পালনে অবহেলাকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সরকারি তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করা, কারিগরি সব ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ২০ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে ৮ বছরেও সেসব সুপারিশ কার্যকর হয়নি পুরোপুরি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো গুরুত্ব পায়নি সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। এ ছাড়া অ্যানালগ পদ্ধতিতে লোড ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকিপূর্ণ করছে জাতীয় গ্রিডকে।

বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, খুব ভালো ট্রান্সমিশন সিস্টেম আছে, কিন্তু জেনারেশন সাইটের দুর্বলতা আছে, বিতরণ সাইটের দুর্বলতা আছে; ওই দুর্বলতা যে পর্যায়ে আছে, তার চেয়ে ওপরে ওঠা যাবে না। সিস্টেমকে টেনে উচ্চ জায়গায় তোলা যায় না। ফলে সমস্যাটা সামগ্রিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালের মহাবিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ। যে কারণে উপেক্ষিতই থেকে যায় উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে ঘিরে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) সুষ্ঠু কারিগরি সমন্বয়ের বিষয়টি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, “যে সিস্টেম আছে বা যে সিস্টেমে আমরা আছি, সেই অবস্থায় সিস্টেমটাকে একটা আধুনিকায়নের রাস্তায় তদারকি করা, যা যা করার আমি তা করছি কি না, সেটা দেখার। ‘এনএলডিসি’ এটাকে আমরা আসলে গুরুত্বহীন করে রেখেছি।”

এ ছাড়া জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের বিষয়টি গ্রাহকদের জানাতে দেরি করা বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তিনটি তদন্ত কমিটি। গত মাসে পশ্চিমাঞ্চলে সমস্যা দেখা দেয়ায় এক মাসের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বিপর্যয় ঘটে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাংশে। এতে দুপুর থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা। সঞ্চালন ব্যবস্থা ডিজিটাল হওয়ার পরও এবারের বিপর্যয়ের কারণ এবং সূত্রপাত–ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন