হোম জাতীয় অসচেতনতায় অনলাইনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে মানুষ: মোস্তাফা জব্বার

জাতীয় ডেস্ক:

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সাধারণ মানুষের প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই অনলাইনে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করে চলেছে জালিয়াত চক্র।

সোমবার (২১ আগস্ট ) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়ক এক কর্মশালায় একথা বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে ডাটা ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডাটার সুরক্ষা। সম্প্রতি এমটিএফই নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন এমএলএম ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগের নামে দেশের কয়েকটি জেলার মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকেও ঐ অ্যাপে বিনিয়োগ করে টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিভিন্ন অপব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন নন। এরই সুযোগ নেয় অনলাইন প্রতারকরা।

ডাটাকে অমূল্য সম্পদ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ডাটা এখন সোনার চেয়েও দামি। তাই ডাটা নিরাপত্তার গুরুত্ব আগের থেকে অনেক বেড়েছে।’

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডাটা আমাদের ব্যবহার করতেই হবে। এটি আমাদের সম্পদ। সুতরাং এটি যেখানে রাখতে হবে সে জায়গাটি হতে হবে নিরাপদ। বাংলাদেশে এক সময় ক্লাউড বলতে কোন ধারণা ছিলো না। তবে এখন সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে গেছে। তাই ক্লাউডের কোন বিকল্প নেই।’

বর্তমান সরকার ফিজিকাল খাতকে ডিজিটাল খাতে রূপান্তর করছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য কর্মশালার উদ্যোক্তা টিআরএনবিকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের সংবাদমাধ্যম কর্মীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। সাংবাদিকরা দক্ষ হলে দেশের সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের ওপর এর প্রভাব অনুভূত হয়।

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মূল নীতি হলো জ্ঞানভিত্তিক সাম্য সমাজ। যেখানে মানুষকে যাচাই করার মাপকাঠি হবে তার জ্ঞান ও দক্ষতা। এ ধরনের শিক্ষামূলক ও যুগোপযোগী উদ্যোগের আয়োজন করছে টিআরএনবি। এ ধরনের কর্মশালা ভবিষ্যতে আরও আয়োজন করতে হবে।

মন্ত্রী জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম দেশে ভূউপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সঙ্গী হতে ব্যর্থ হলেও, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কম্পিউটার সামগ্রীর ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে অত্যন্ত দক্ষ।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্টান্ডার্ডের নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতিমালার সমালোচনা করেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এই দেশে ব্যবসা করবে কিন্তু তারা কমিউনিটি স্টান্ডার্ডের নামে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা মেনে চলে। অথচ বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এক নয়। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ ও সেখানে হওয়া অপরাধের ধরন এক নয়। এই জিনিসটা তাদের বুঝতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপনের নামে বাংলাদেশ থেকে বাধাহীনভাবে ডলার নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারের তরফে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরকারের অনুমতি ছাড়া দেশ থেকে কোন ডলার নিয়ে যেতে না পারে।’

তিনি বলেন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পর দেশে পর্নসাইট, জুয়ার ওয়েবসাইটসহ ত্রিশ হাজার আপত্তিকর ওয়েবসাইট বন্ধ করেছি। এখন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেশের মানুষের ১১ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যা সারা দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থানকে প্রভাবিত করছে।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন, ওপেনস্ট্যাক বাংলাদেশের কান্ট্রি অর্গানাইজার মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন