জাতীয় ডেস্ক :
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সাধারণত বছরের অক্টোবর মাসে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে পর্যটকেরা দ্বীপটিতে যাতায়াত করে থাকেন। চলতি বছর এখনও সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন উপায়ে দ্বীপটিতে গিয়ে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আটকে পড়েছেন তিন শতাধিক পর্যটক।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের আধিক্য বিরাজ করায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দুর্ঘটনা এড়াড়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে সব ধরনের নৌযার চলাচল নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে অনুমতি ছাড়াই সেন্টমার্টিনে যাওয়া পর্যটকেরা দ্বীপটিতে আটকে পড়েছেন। অনেকে বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও টেকনাফ ফিরতে অবস্থান করছেন জেটি কিংবা জেটির পাশে দোকানগুলোতে।
রফিক নামের এক পর্যটক বলেন, সেন্টমার্টিনে প্ল্যান করে এসেছি দুই দিন থাকব। কিন্তু সোমবার (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ৪ দিন হয়ে গেল এখনো ফিরতে পারছি না। টাকা পয়সার সমস্যা হচ্ছে না; কিন্তু চাকরি করি, দুই দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি; এখন ৪ দিন হয়ে গেল। এখন ইচ্ছে করলেও ঢাকায় ফিরতে পারছি না।
ইমতিয়াজ নামে অপর এক পর্যটক বলেন, সেন্টমার্টিন এসেছি ৩ দিন হলো। এখন ফেরার জন্য অপেক্ষায় আছি। রোববার ও সোমবার জেটিঘাটে এসে অপেক্ষা করি; কখন ট্রলার বা স্পিডবোট ছাড়বে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কোস্টগার্ড ট্রলার বা স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হলেই তারপরই ঢাকা ফিরতে পারব।
এদিকে, আটকা পড়া পর্যটকরা সবাই নিরাপদে আছেন। তবে নিজ গন্তব্যে ফিরতে না পারায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন বলে জানালেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা সাজ্জাদুল রহমান বাতেন বলেন, মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে। সাগরও উত্তাল। যার কারণে গেল দু’দিন ধরে এখনো ৩০০ এর বেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন। তাদের সঙ্গে আমরাও বেশ কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ী আটকা পড়েছি। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হলে এবং ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দিলেই তারপর টেকনাফ ফিরতে পারব।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকরা সবাই নিরাপদে আছেন। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আটকেপড়া এসব পর্যটককে টেকনাফ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
তবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পর্যটকদের ধৈর্য্য ধরতে আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা উচিত। আবহাওয়া পরিস্থিতি মঙ্গলবার পর্যন্ত খারাপ থাকবে। এর পরদিন থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে এখনো পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দা ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করেন। এসব ট্রলারে করে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন গিয়েছে। সুতরাং, অবৈধ নৌযানে করে যারা পর্যটকদের সেন্টমার্টিন নিয়ে যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আটকা পর্যটকরা সবাই ভালো আছেন এবং নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টেকনাফে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।