হোম আন্তর্জাতিক পাকিস্তানকে ব্যবহার করে মিয়ানমারে অস্ত্র পাঠাচ্ছে চীন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

গত বছরের অভ্যুত্থান ও ব্যাপক চীনবিরোধী বিক্ষোভের পর থেকে মিয়ানমারের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছে চীন। মিয়ানমারের অনেক নাগরিক বিশ্বাস করেন, বেইজিং সামরিক শাসনকে সমর্থন করে।

গত মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারে চীনের রাষ্ট্রদূত চেন হাই ইয়াঙ্গুনের বোটাটাউং প্যাগোডায় চীনা অর্থায়নে নিরাপত্তা দরজা স্থাপন ও উদ্বোধন উপলক্ষে জান্তার ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী উ কো কোর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে চেন হাই বলেন, মিয়ানমার ও চীনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্প্রীতি দেখে তিনি মুগ্ধ।

অভ্যুত্থানের পর থেকে বেইজিং শুধু জান্তার সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়, একইসঙ্গে জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সংলাপ করার ব্যাপারেও আগ্রহী ছিল।

তবে চীন বিশ্বস্ত প্রতিবেশী নয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি বেইজিংয়ের অপ্রকাশিত সমর্থন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। রাশিয়ার বিপরীতে, চীন সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে না।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বেইজিং জান্তার কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ও রফতানি করার জন্য ‘পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছে। তাছাড়া সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে।

এদিকে জান্তা নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইং যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার ও ক্ষেপণাস্ত্রের কেনাকাটার তালিকা নিয়ে রাশিয়ায় বারবার সফর করছেন। এতে চীন উদ্বিগ্ন যে, তারা হয়তো অস্ত্রের গ্রাহক হিসেবে মিয়ানমারকে হারাবে।

পাকিস্তান মিয়ানমারের বিমান বাহিনীকে দুটি জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক-২ বিমান সরবরাহ করছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ১৬টি জেএফ-১৭ থান্ডার মাল্টি-রোল বিমান পাকিস্তান থেকে ৫৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনেছিল। বিমানটি পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স ও চীনের চেংডু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন যৌথভাবে তৈরি করেছে।

জান্তা পাকিস্তান থেকে ভারী মেশিনগান, ৬০ ও ৮১ মিমি মর্টার এবং এম-৭৯ গ্রেনেড লঞ্চার কেনার কথাও বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

এর আগে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী অভিযানের অভিযোগে মিয়ানমার সরকারের কঠোর সমালোচক ছিল পাকিস্তান। আবার মিয়ানমার অতীতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরাকানে রোহিঙ্গাদের স্যালভেশন আর্মিকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ করেছিল।

তবে দৃশ্যত দুই দেশ বেইজিংয়ের নির্দেশে ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং পাকিস্তান ও মিয়ানমারের মধ্যে অস্ত্র চুক্তির দালালি করছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দাবি, চীন গোপনে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। সেই গোপন সহযোগিতার অংশ হিসেবে, বেইজিং ইসলামাবাদকে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহের ‘প্রক্সি’ বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।

বেইজিং জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ ও মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাবের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বেড়ে যায়। অনেকে বিশ্বাস করে, সামরিক অভ্যুত্থানে চীনের হাত ছিল। বেইজিং জান্তাকে নিন্দা করতে অপরাগ হলে রাখাইন রাজ্য থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়াসহ চীনা পণ্য বয়কটের হুমকি দেয়া হয়েছিল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে, প্রতিরোধ বাহিনী সাগাইং অঞ্চলে একটি চীন-সমর্থিত নিকেল-প্রসেসিং প্ল্যান্টে আক্রমণ করেছিল। এমনকি বেইজিং এনইউজিকে অনুরোধ করেছিল, যাতে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিরোধ মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।

বেইজিং প্রকাশ্যে সরকারকে গণতন্ত্রে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। আবার এটাও বিশ্বাস করা হয় যে, চীন গোপনে জান্তাকে অস্ত্র করেছে। সিএইচ-৩ ড্রোনসহ ছোট অস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্র রফতানি করছে।

গত বছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক জেনস ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স রিভিউ ও ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিংক ট্যাংক জানিয়েছিল, চীনা-নির্মিত সিএইচ-৩এ ড্রোন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে ব্যবহার করেছে।

বেইজিং ও ইসলামাবাদের অশুভ পরিকল্পনা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসকে (পিডিএফ) বিপর্যস্ত করতে পারে। পিডিএফ জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রায় প্রতিদিনই জান্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে৷ মিয়ানমারের ৩৩০টি শহর-উপশহরের মধ্যে ২৫০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

মিয়ানমারের জনগণের প্রতি বন্ধুত্বের প্রমাণ হিসেবে চীন গত মাসে বোটাটাং প্যাগোডার মতো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে। কিন্তু বেইজিং যদি গোপনে জান্তাকে সামরিক সরঞ্জাম পাঠায়, তাহলে সেটির ফল ভালো হবে না।

ইরাবতী থেকে ভাষান্তর
লেখক: ইয়ান নাইং, মিয়ানমার ও চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ছদ্মনাম।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন