জাতীয় ডেস্ক :
তৃতীয় কোনো দেশে নয়; স্বদেশ মিয়ানমারেই ফিরতে চায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্টের কয়েকটি দেশের সেনা প্রধানসহ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা ক্যাম্পে গেলে এমন অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।
নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও চেয়েছেন তারা।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মাঝেই কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুটে যান ২৪ দেশের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা।
বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান জেনারেল চার্লস এ ফ্লিনসহ প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে বর্ধিত ক্যাম্প-৪ এর সিআইসি কার্যালয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনার নানা দিক তুলে ধরা হয়।
এরপর দেশি-বিদেশি সেনা কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। এতে ২৩ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আগত প্রতিনিধি দলকে তাদের সমস্যা ও সুপারিশ সমূহ তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ওসমান বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গোলাগুলি করছে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করার জন্য করছে। আর আরকানের জমিতে নানা ধরণের তালবাহানা করে রিপোর্ট তৈরি করছে মিয়ানমার। যেহেতু আরকান এখন রোহিঙ্গা শূন্য। এখন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও নির্যাতন করছে এসব বিষয় তুলে ধরেছি ক্যাম্পে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে।
আরেক রোহিঙ্গা মাস্টার কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মাটিতে ৫ বছর ধরে আছি। এখন প্রতিনিধি দলকে শুধু বলেছি, বাংলাদেশে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত একটা পদক্ষেপ নিয়ে যাতে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে পারি এই ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি।
প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে সেনা কর্মকর্তারা। এ সময় তৃতীয় কোনো দেশে নয়; স্বদেশে ফিরতে উদগ্রীব বলেও সেনা কর্মকর্তাদের জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা তৃতীয় কোনো দেশ নয়, আমাদের দেশ মিয়ানমারেই ফিরতে চাই। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে মিয়ানমারে। তাই অন্য কোনো দেশে যেতে চাই না। সেনা কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ মিয়ানমারে তৈরি করা হোক। আমরা স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে উদগ্রীব।
এরপর ২৪টি দেশের প্রতিনিধিরা বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পের বাস্তব চিত্র স্বচক্ষে অবলোকন করেন। তারপর ক্যাম্প ছেড়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়।
২৪টি দেশের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী যৌথভাবে আয়োজিত ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্ট সেমিনার ১২-১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় কক্সবাজারের ইনানীর একটি অভিজাত হোটেলে বিভিন্ন দেশের বাহিনী প্রধানরা একটি গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেন।
সেমিনারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা বাড়াতে সামরিক কূটনীতি’। এ ছাড়াও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্য সদস্যরা বলিষ্ঠ শান্তিরক্ষা মিশন ও এর করণীয় শীর্ষক ব্রেক আউট সেশন এবং জুনিয়র নেতারা পেশাদারিত্বের ওপর পৃথক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান জেনারেল চার্লস এ ফ্লিনসহ অংশগ্রহণকারী দেশ সমূহের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এ সম্মেলন অত্র অঞ্চলের স্থলবাহিনীগুলোর বৃহত্তম সমাবেশ। যার মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া, সংলাপ ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশ তৃতীয় বারের মতো সেমিনারের সহ-আয়োজক। এর আগে ১৯৯৩ এবং ২০১৪ সালে এই ইভেন্টের সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ।