হোম জাতীয় ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ মন্তব্য করে তুমুল সমালোচনার মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক :

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বেজুড়েই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছে, বেহেশতে আছে’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য ইতোমধ্যে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলছে মন্ত্রীর মন্তব্যের তুমুল সমালোচনা।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সুখের তুলনা করতে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, একটি পক্ষ থেকে এমন প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি।’

অর্থপাচারের বিষয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে নতুন করে তথ্য চাওয়া হবে কি না প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অর্থপাচার হয়, তাদের কাছে তথ্য চাওয়া হলে তারা তথ্য দিতে চায় না। এটা তাদের মজ্জাগত সমস্যা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সুইস ব্যাংকের কাছে অতীতে ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছিল। সে সময় তারা শুধু একজনের তথ্য দিয়েছিল। আরও কয়েকবার তথ্য চাওয়া হলেও তাদের রাষ্ট্রদূত বলেছেন তথ্য চাওয়া হয়নি।’

এ সময় ‘সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের বন্ধু দেশ’ উল্লেখ করে তথ্য-বিভ্রাট না করার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কি বলেছেন সেটা আমি পুরোপুরি শুনিনি। পুরোপুরি না শুনে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এমন কোনো কথা আমাদের বলা সমীচীন নয়, যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। জনগণের কাছে ভুল বার্তা যেন না যায়। বার্তা হলো একটাই, যেটা সত্য; সেই সত্যটা বলা কোনো দোষের কিছু নয়।’

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। ধনী রাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রতিটি দেশ সমস্যার মুখে পড়েছে, বিশেষ করে আমদানিনির্ভর দেশগুলো। তবে যারা আমদানিনির্ভর নয়, তারাও কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বের ধনী দেশ আমেরিকা, সেখানেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জনদুর্ভোগ আমাদেরও ভালো লাগে না, এটা আমরা চাই না। তারপরও বাধ্য হয়েই আমাদের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেই এই মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করা হবে।

এদিকে একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট, ছড়াকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘বাংলাদেশে নানা ধরনের সংকট আছে। বেহেশত বলার আগে উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কিন্তু বলেছেন অনেক দেশের তুলনায়। এখান থেকে যদি আপনি একটি শব্দ বের করে আনেন, তাহলে তো সমস্যা। যেমন শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান বা আফ্রিকার মতো অনেক দেশে জ্বালানি তেলের সংকট আছে, খাদ্য সংকট আছে। সেসব দেশের সঙ্গেই মূলত উনি তুলনা করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উন্নত দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু বর্তমানে জনগণ কষ্টে রয়েছে, সেহেতু দায়িত্বশীলদের আরও সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত। করোনাকালে অনেকে বলেছেন, চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে, সেটা কিন্তু হয়নি। সরকার মানুষের জন্য চিকিৎসা ও টিকার ব্যবস্থা করেছে। আমরা আশাবাদী, এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিও ভালোভাবে কাটিয়ে উঠব।’

শুধু বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীই নন, অতীতেও বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করে অনেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। হারিয়েছেন ক্ষমতা বা চাকরি। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে, রামপুরায় গুলিতে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে’, এমন মন্তব্য করে দায়িত্ব হারান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী দুজনই আমলা থেকে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমলাদের এমন মন্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন রাজনীতিবিদরা। আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতি একসাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। যার যে দায়িত্ব তাকে সেই দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগে অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদ রয়েছেন। অথচ তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন