বাণিজ্য ডেস্ক :
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তেল বিক্রি করে চলতি বছর ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। তা সত্ত্বেও ৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা লোকসানের কথা বলছে তারা। এছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
এসব তথ্য তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়ার কথা জানালেও বিপিসি কীভাবে এ অর্থ লাভ করেছে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি ড. ফাহমিদা খাতুন।
এ সময় সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিপিসি গত ৬ বছরে ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এর মধ্যে সরকার নিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। তাহলে বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায়? বলা হয়েছে, সে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু হিসাব খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা কোনটা লাভ, কোনটা লোকসান বলছে সেটা জানা প্রয়োজন।
একইসঙ্গে বিপিসির পুরাতন হিসাবের খতিয়ান জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।
সিপিডি জানিয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ তথ্য-উপাত্তের ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের সামনে আসা উচিত। ভোক্তার ওপর দায় না চাপিয়েও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা যেত।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ফাহমিদা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানে বেশি। এখানে মনে রাখতে হবে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। দাম কাদের চেয়ে বেশি, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে বেশি আছে। যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি, তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যখন তুলনা করব তখন সে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন খাতের ভাড়া বৃদ্ধি পায়, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে, ফলে আমদানি আবার বেড়ে যাবে। শিল্পের উৎপাদনেও খরচ বেড়ে যাবে। তাহলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ, ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। এর বড় ধাক্কা আসবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর। সঞ্চয় ভেঙে খাবে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে সুদের হার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখান থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
এ সময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান।