জাতীয় ডেস্ক :
একটা সময় পদ্মা সেতুতে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বন্ধ করে সরে গেছে বিশ্ব ব্যাংক। তাতে বসে থাকেনি বাংলাদেশ। পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে চীনের সহায়তায় গড়ে তোলায় হয় পদ্মা সেতু। যা বিশ্ব ব্যাংক তো বটেই সেই সক্ষমতা আর ইতিবাচক জেদ দেখেছে পুরো বিশ্ব।
ভারত যেহেতু বছরের পর বছর বাংলাদেশকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিচ্ছে না, তাই ভারতের দিকে তাকিয়ে না থেকে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে মহাপরিকল্পনার যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে আগ্রহী চীন। তাই চীনের সেই আগ্রহকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের কাজ করা উচিত। এমন মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
সম্প্রতি তাইওয়ান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছেছেন দু’দেশের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের পররাষ্ট্র বিশ্লেষকদের মত হলো, এ দুই পরাশক্তির কাছ থেকে আমাদের উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
তারা আরও বলছেন, অতিথিদের বার্তা দিতে হবে যে, কোনো ধরনের সামরিক জোটে অংশগ্রহণ নয় বরং আলোচনার মধ্য দিয়ে সব সংঘাত এড়ানোই বাংলাদেশের নীতি। এ পথেই হাঁটতে চায় বাংলাদেশ।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের কোনো এক-পাক্ষিক অবস্থান নেয়া সঠিক হবে না। বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের যে নীতিতে বিশ্বাসী সেই নীতি মেনে চলমান বৈশ্বিক সংকটকে মোকাবিলা করতে হবে।
সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন শনিবার (৬ আগস্ট) একই দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলছেন, এ সফরেই রোহিঙ্গা সংকট গুরুত্ব দিয়ে দুদেশকেই বার্তা দিতে হবে। কারণ চীনের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র মিয়ানমার একই সঙ্গে চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগীও বটে।
সফরের দ্বিতীয় দিনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীনের পাশে থাকা, খাদ্য ও জ্বালানি ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তাইওয়ান ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
এদিকে চার দিনের সফরে আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক ইস্যু ছাড়াও বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে ইউক্রেন পরিস্থিতি, তাইওয়ান ইস্যু, খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুটি আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
ভূ-রাজনৈতিক নানা সমীকরণের নানা মাত্রায় বাংলাদেশকে বরাবরই কাছে পেতে চায় বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। বিশ্লেষকদের মত হলো এ সবদিক বিবেচনা করেই আলোচনা এগোতে হবে বাংলাদেশকে।