আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। এবার নতুন প্রজন্মের আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে রুশ বাহিনী। রুশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের ড্রোন ধ্বংসে লেজার অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন রাশিয়া। পশ্চিমারা বলছে, অভিযানে রুশ সেনাবাহিনীর কৌশল ঠিকভাবে এগোচ্ছে না। তবে মস্কো বলছে, সামরিক অভিযান পরিকল্পনা মতোই চলছে এবং মস্কোর লক্ষ্য অর্জিত হবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই সংঘাতে সরাসরি সেনা পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। তবে ইউক্রেনে তারা শত কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে ড্রোন, হউইটজার আর্টিলারি, বিমান-বিধ্বংসী স্টিনজার ক্ষেপণাস্ত্র ও ট্যাংক-বিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
বুধবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ জানান, ইউক্রেনে পশ্চিমাদের পাঠানো অস্ত্র বহরের মোকাবিলায় কিছু ‘গোপন অস্ত্র’ মোতায়েন করা হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনও লেজার অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, লেজার অস্ত্র ব্যবস্থা প্রায় ১ হাজার মাইল দূরে থাকা স্যাটেলাইটও অকেজো করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ড্রোনও ধ্বংস করতে পারে।
২০১৮ সালে বেশ কিছু নতুন অস্ত্র উন্মুক্ত করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এগুলোর মধ্যে ছিল নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচে চলাচলে সক্ষম পারমাণবিক ড্রোন, সুপারসিনক ক্ষেপণাস্ত্র ও নতুন লেজার অস্ত্র। লেজার অস্ত্রটি পুতিন নিজেই নামকরণ করেছিলেন। তিনি এর নাম দেন ‘পেরেসভেট’।
ইউক্রেন অভিযানে এই পেরেসভেট লেজার অস্ত্রই ব্যবহার হচ্ছে বলে এদিন নিশ্চিত করেন রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ। মস্কোতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, পেরেসভেট ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। এগুলো পৃথিবী থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার উঁচুতে থাকা স্যাটেলাইটও অকেজো করে দিতে পারে।
বরিসভ আরও জানান, যদিও এই মুহূর্তে রাশিয়ার কাছে পেরেসভেটের তুলনায় আরও শক্তিশালী লেজার অস্ত্র রয়েছে। এগুলো ড্রোন ও অন্যান্য সরঞ্জামকে মুহূর্তে পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম। গত মঙ্গলবার (১৭ মে) লেজার অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কথা তুলে ধরে বরিসভ জানান, মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ৫ কিলোমিটার দূরে থাকা ড্রোন পুড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
এমন অস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী বরিসভ বলেন, ‘হ্যাঁ, ইতোমধ্যে সেখানে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।’ এই অস্ত্রকে ‘জাডিরা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জাডিরা সম্পর্কে এখনও তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে ২০১৭ সালে রুশ সংবাদমাধ্যম জানায়, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটম এই অস্ত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছে।
রাশিয়া যে লেজার অস্ত্র উদ্ভাবনে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে, বরিসভের বক্তব্য সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। বরিসভ জানান, তিনি সম্প্রতি সারোভ থেকে ফিরেছেন। এটি নিজনি নভগোরোদ অঞ্চলের একটি শহর। এর আগে আরজামাস-১৬ বলে পরিচিত ছিল। শহরটি নিয়ে রাশিয়া চরম গোপনীয়তা অবলম্বন করে। এর কারণ এটি রাশিয়ার পরমাণু গবেষণার প্রাণকেন্দ্র।
বরিসভ জানান, নতুন প্রজন্মের লেজার অস্ত্র ‘বিস্তৃত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ব্যান্ড’ ব্যবহার করে। আগামী দিনগুলোতে প্রচলিত অস্ত্রের জায়গায় নতুন প্রজন্মের এসব অস্ত্র মোতায়েন করা হবে। তার কথায়, ‘এটি কোনও কাল্পনিক ধারণা নয়, এটি বাস্তবতা।’