হোম আন্তর্জাতিক ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের নতুন কৌশল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দেবে চীন। পশ্চিমাদের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক তলানিতে নেমে যাওয়ায় এমন ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এ সংঘাতে সামরিকভাবে জড়াবে না বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি। বিশ্লেষকরা এমন মতই দিয়েছেন।

কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেনে হামলা চালাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকটা জোরালো দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও সেই দাবি অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

মিথ্যা গুজব ছড়ানো ও সংঘাত সৃষ্টির জন্য বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছে।

বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি চীন সফরে যান পুতিন। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বসে তিনি ঘোষণা দেন—দুদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের গভীরতায় কোনো সীমা থাকবে না।

উইঘুরসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বেইজিং অলিম্পিক বর্জন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চীন-রাশিয়া কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।

চীনের পরীক্ষা

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চীনকে নতুন করে পরীক্ষায় ফেলে দেবে। রাশিয়াকে সমর্থন করে তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, তা কতটা কার্যকর করা সম্ভব, এখন তাদের সামনে সেই প্রশ্ন তৈরি হবে। কারণ, বহুদিন থেকে ভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ না-করার পররাষ্ট্রনীতির কথা বলে আসছিল চীন।

বেইজিংয়ের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচয় আছে—এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিশ্চিতভাবেই চীন সামরিকভাবে জড়িত হতে চাইবে না। দেশটির সামনেই সেই পরিস্থিতিও নেই।

রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সেই ইনহং বলেন, যদিও একটি দৃশ্যত জোটে নিজেদের সুবিধাজনক সম্পর্ককে ছাড়িয়ে আরও দূরে এগিয়ে গেছে চীন-রাশিয়া, তবুও দুই বৃহৎ প্রতিবেশী একটি আনুষ্ঠানিক জোট গঠন থেকে অনেকটা তফাতে আছে। অর্থাৎ, পরস্পর আক্রান্ত হলে সেনা ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর মতো জোট তারা গড়েনি।

এর আগে সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ইউক্রেন সংকট সুরাহার আহ্বান জানিয়েছে চীন। সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক লি মিংজিয়াং বলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে যুদ্ধে চীন যেমন রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সহায়তা প্রত্যাশা করে না, রাশিয়ার চাওয়াও ঠিক তেমন। ইউক্রেন আগ্রাসনে চীনের কাছে রাশিয়ার কোনো সামরিক সহায়তা প্রত্যাশা নেই।

জাতিসংঘে ভেটো

রুশ হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দার কোরাসে যুক্ত না হয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্বের পরিচয় দিতে পারে চীন। গত মাসে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি বন্ধে মার্কিন অনুরোধে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে চীন।

রুশ-চীন সম্পর্ক ২০১৪ সালের চেয়ে একটু এগিয়েছে বলা চলে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে একীভূতকরণের স্বীকৃতি না-দিতে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল চীন।

ক্রিমিয়ায় রুশ হানা দেওয়ার পর চীনা উন্নয়ন ব্যাংক ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নাসহ দেশটি কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিয়েছিল।

যুদ্ধ চায় না চীন

রাশিয়া যাতে ইউক্রেন হামলা না করে—এমনটিই প্রত্যাশা করছে চীন। অধ্যাপক সেই ইনহং বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বে যেভাবে মেরুকরণ ঘটেছে, তাতে রাশিয়ার সঙ্গে চীনকেও বিচ্ছিন্ন কিংবা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ঘটনায় মস্কোর ওপর আরোপ করা রফতানি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করলে চীনা কোম্পানিগুলোকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সূত্র বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রযুক্তি ও বাণিজ্য-সম্পর্কিত যে নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা, তা সামাল দেওয়া চীনের সক্ষমতার বাইরে। চীন ইচ্ছা করলেই রাশিয়ার সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।

এসব নিষেধাজ্ঞা যেসব দেশ অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পশ্চিমা দেশগুলো এ রকম কঠোর অবস্থান নেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেন সংকটে কোনো অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে চায় না চীন। বিশেষভাবে, প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এখন তার ক্ষমতার নজিরবিহীন তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করতেই ব্যস্ত। তিনি স্থিতিশীলতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

চীন এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সুরাহা চাইলেও তাতে কান দিচ্ছেন না পুতিন। এখানে কোনো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা সফল হওয়ার নিশ্চয়তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন