স্বাস্থ্য ডেস্ক :
বাংলাদেশের সরকার করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার আগের টার্গেট থেকে সরে এসেছে।
এর আগে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়, পর্যায়ক্রমে ৮০% মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেও সংসদকে বলেন যে দেশের ৮০% মানুষকে টিকা দেয়া হবে। কিন্তু আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন যে এই টিকা দেয়া হবে মোট জনগোষ্ঠীর ৭০% মানুষকে।
টিকা দেয়ার এই লক্ষ্যমাত্রা ১০% কমিয়ে আনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের টার্গেট ৭০% মানুষকে টিকা দেয়া। সাড়ে ১২ কোটি জনগণ, সেটাই মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০%।”
“এরমধ্যে কোটি খানেক লোক দেশের বাইরে আছে। তারা কিছু টিকা আমাদের এখান থেকে নিয়ে যায় আবার কিছু টিকা বিদেশে নিয়ে থাকে। কাজেই সব মিলিয়ে হিসেব করলে দেখবেন যে সংখ্যা আমরা বলেছি সেটা ঠিক আছে,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
পরিকল্পনার বাইরে পাঁচ কোটি মানুষ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।
সেই হিসাবে এই জনসংখ্যা ৭০ ভাগ হল প্রায় ১২ কোটির মতো। সরকার এই ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলছে।
বাকি ৫ কোটি জনগোষ্ঠীকে টিকার পরিকল্পনার বাইরে রাখার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেছেন, এর মধ্যে একটি বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বয়স ১২ বছরের কম। এবং করোনাভাইরাসের টিকা এখন পর্যন্ত ১২ বছরের নীচে শিশুদের দেয়া হচ্ছে না।
তার মতে, “৭০% জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১২ বছরের বেশ বয়সী মানুষ কভার হবে। বাকি থাকবে শিশুরা, তাদের তো এই টিকা দেয়া হচ্ছে না।”
হার্ড ইমিউনিটি
এছাড়া শুরুতে যে ৮০% মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল সেটিকে “ইন্ডিভিজুয়াল স্টেটমেন্ট” বা ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে যে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৭০% শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটির এই শতাংশের হিসাব নির্ভর করে ওই ভাইরাসটির সংক্রমণের সক্ষমতার ওপর। যেমন হামের হার্ড ইমিউনিটির জন্য ৯৫% জনগোষ্ঠীকে এবং পোলিওর ক্ষেত্রে ৮০% জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনলেই হয়।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ৭০% মানুষকে টিকা দিতে বলছে সেটা অনেকটাই প্রাথমিক কিছু গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বলেছে। এটা এখনও শতভাগ নিশ্চিত কোন হিসাব নয়।
“আপনাকে চিন্তা করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ কিছু বলেছেন কিনা। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় এই শতাংশের হিসাব অনুমান করে বলা হয়েছে যে ৭০% টিকা দিলে হার্ড ইমিউনিটি হবে। এটা শতভাগ নিশ্চিত করে কেউ বলবে না। কারণ বিষয়টা গবেষণাধীন।” বলেন মি. আমিন।