কঞ্জন কান্তি চক্রবর্তী, ঝালকাঠি :
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়। সকালে পোড়া লঞ্চে স্বজনদের খুঁজতে এসে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরেন তারা।
বেঁচে যাওয়া যাত্রী আব্দুর রহিম জানান, রাতে ডেক থেকে তিনি হঠাৎ বিকট শব্দ পান। তারপর লঞ্চের পেছন দিক থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখেন। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো লঞ্চ গ্রাস করে ফেলে। আতঙ্কিত হয়ে তিনি ডেক থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। দিয়াকুল গ্রামের লোকজন নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন। তারাই রহিমকে উদ্ধার করে গরম কাপড় দেন। পরে সকালে তাকে ট্রলারে করে ঝালকাঠি শহরে নেয়া হয়।
বেঁচে যাওয়া এক নারী জানান, আগুন যখন এখানে আসছে, আমি ঘুমে ছিলাম, বিকট একটা শব্দ আসছে, আমার ছেলে ১৩ বছর বয়স, এ বছর এইটে পরীক্ষা দিছে। ওরে আমি উঠাইছি। ও তো লম্বা হয়ে গেছে, ওরে টাইন্না এইখান থেকে ওইখানে নিছি। মানুষ আর মানুষ। ছেলে তো সাঁতার জানে না, যখন সবাই লাফ দেয়, আমার তো লাফ দেওয়ার সাহসই নাই, ছেলে বাঁচবে না, আমি বেঁচে কী করব?”
“আমরা দোয়া কালাম পড়ে রেডি হইছি, বাচ্চারে কোলে নিছি, আর কোনোদিন দেখা হবে না। কেয়ামতের দিন দেখা হইলে বাবা, তোমারে ভালো রেজাল্টের জন্য কত মারছি, তুমি আমারে ক্ষমা কইরে দিও। আমার ছেলে অমারে ধইরে বসছে চুমু দিয়া, বলে ‘আম্মু, তোমারে ছাড়া বাঁচব না’। ও লাফ দিছে, আমি বোরকা ছিড়ড়া ঝাঁপ দিছি। আমি মনে হয় ৫ ফুট না কয়ফুট গেছি জানি না, হঠাৎ কইরা ভাইসা উঠছি, সাঁতার দিয়া ছেলেরে ধরছি। শেষ পর্যন্ত নদীতে লাফ দিয়ে বেঁচে যান ওই নারী ও তার ছেলের।
আবদুল্লাহ নামের এক যাত্রী জানান, আরও অনেকের মত তিনিও ঝঁপিয়ে পড়েছিলেন। তবে কেবিনের যাত্রীদের অনেকে সে সুযোগ পাননি। নদী তীরের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তীরে উঠতে পেরে প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে লাফিয়ে পড়া নারী আর শিশুরা সবাই উঠেতে পেরেছেন কি না, তিনি নিশ্চিত নন।
তবে অনেকেই বাঁচতে পারেননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা, আহতদের ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৭৫ জন যাত্রীকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে।