অনলাইন ডেস্ক :
মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকায় নিজেকে আবৃত করে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে করোনাভাইরাস মোকাবিলার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ৩২ বছর বয়সী ইমরানা সাইফি। দুই মাস আগেও যেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলি হয়েছে বহু মানুষ সেখানেই সম্প্রীতির বার্তা বয়ে চলেছেন এই মুসলিম তরুণী। রোজা রেখেই মন্দির-মসজিদ-গুরুদুয়ারায় গিয়ে গিয়ে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে চলেছেন তিনি। তাকে স্বাগত জানিয়ে মন্দিরের অভ্যন্তরেও প্রবেশ করতে দিচ্ছেন পুরোহিত। বলছেন ঘৃণা নয় ভালোবাসা দিয়েই সবারই পরস্পরের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) নিয়ে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উসকানির পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব শুরু হয়। সপ্তাহখানেক ধরে চলা এই তাণ্ডবে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়, গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় কয়েক শত। যাদের বেশিরভাগই মুসলমান সম্প্রদায়ের। ওই তাণ্ডবের ক্ষত সারিয়ে ওঠার আগেই ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে হানা দেয় করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত ভারতের অন্যতম ভাইরাস কবলিত এলাকা দিল্লি।
করোনা মোকাবিলায় জীবাণুনাশকের স্প্রে হাতে তুলে নিয়েছেন তিন সন্তানের মা ইমরানা সাইফি। স্থানীয় আবাসিক কল্যাণ সংস্থার সরবরাহ করা স্প্রে ট্যাঙ্ক কাঁধে নিয়ে বেশ কয়েকটি মন্দির, মসজিদ আর গুরুদুয়ারায় তা ছেটানোর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। আর পবিত্র রমজানে রোজা রেখেও তা পালন করে যাচ্ছেন প্রতিদিন।
পুরোহিতেরাও ইমরানাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। এমনকি তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে মন্দিরের ভেতরে ও বাইরে জীবাণুনাশক ছেটাতে দিচ্ছেন। উত্তর দিল্লির আশেপাশের এলাকায় প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময়ও আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মাত্র সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ইমরানা সাইফি। এবারে ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর আরও তিন নারীকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছেন নিজের ‘করোনা যোদ্ধা’ দল। এই দলটি প্রতিদিন জাফরাবাদ, মুস্তফাবাদ, চান্দবাগ, নেহরু বিহার, শিব বিহার, বাবু নগর এলাকাকে জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা বলছেন আজান দেওয়া মসজিদ কিংবা ঘণ্টা বাজানো মন্দিরের মধ্যে তারা পার্থক্য দেখেন না।
ইমরানা সাইফি বলেন, ‘আমি ভারতের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই। আমি বার্তা দিতে চাই যে আমরা সবাই আলাদা কিন্তু এক সঙ্গে থাকতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্দিরের পুরোহিত কিংবা অন্য কেউ থামায় না আর এখন পর্যন্ত কোনও ধরণের বাধার মুখে পড়িনি।’
নেহরু বিহারের নব দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত পন্ডিত যোগেশ কৃষ্ণ এনডিটিভিকে বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার সহায়ক। আমাদের এভাবেই একে অপরকে সাহায্য করা উচিত। ঘৃণা বর্জন করে ভালোবাসা আকড়ে ধরা উচিত।’
ইমরানা সাইফির স্বামী নেয়ামত আলী একজন মিস্ত্রী। স্বাভাবিক সময়ে স্বামীর কাজে সহায়তা করলেও করোনা মহামারির সময়ে দুজনেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। সংসারের কাজকর্ম আর তিন সন্তান দেখভালের পর তাই জীবাণুনাশক ছেটানোর কাজে নেমে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মানুষ বোঝে এটা ভয়ানক রোগ আর সেকারণেই আমাদের জীবাণুনাশক কার্যক্রমে এখনও কোনও বাধার মুখে পড়িনি। এই মহামারি এখানকার সম্প্রদায়দের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।’