হোম Uncategorized মণিরামপুরে প্রতারক বাবুলের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা একাধিক পোল্ট্রি খামারী

যশোর প্রতিনিধি:

মণিরামপুরের সীমান্তবর্তী চেঁচুড়ি গ্রামের বাবুল হোসেনের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা আশপাশের কয়েকজন পোল্ট্রি খামারী। অভিযোগ উঠেছে, এসব পোল্ট্রি খামারীদের ব্যাংক লোন পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে চেকের পাতা সংগ্রহ করে তাদের নামে আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেছেন। আবু সাইদ, আজিজুর রহমান, অমৃত মন্ডল, আঃ রশীদ, হামিদ মোড়লসহ বেশ কয়েকজন পোল্ট্রি খামারীদের সাথে একের পর এক প্রতারনা করে চলেছেন বাবুল ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী প্রতারক বাবুল হোসেন। সে দীর্ঘদিন ধরে এসব খামারীদের সাথে পোল্ট্রির বাচ্চা, ঔষধ ও পোল্ট্রির খাবারের ব্যবসা করে আসছিলেন। বাবুল হোসেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চেঁচুড়ি গ্রামের রজব আলী গোলদারের ছেলে।

জানা যায়, বাবুল ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী বাবুল হোসেন মণিরামপুর ও অভয়নগরের একাধিক পোল্ট্রি খামারীদের সাথে গত ৭/৮ বছর ধরে পোল্ট্রি ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে বাবুল হোসেন এ সব খামারীদের নিকট থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের পাতা নিয়ে তাদের পোল্ট্রি বাচ্চা, ঔষধ ও খাবার সরবরাহ করেন। পরে পোল্ট্রি বাচ্চাগুলো বিক্রির উপযোগী হলে বাজার মূল্য থেকে কেজি প্রতি ১৫/২০ টাকা কমে সেগুলো ক্রয় করে নেয়। এতে মুরগীর সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হয় ওইসব খামারীরা। স¤প্রতি ওইসব খামারীরা বাবুলের সাথে ব্যবসা করতে রাজি না হয়ে চেকের পাতা ফেরত চাইলে তা ফেরত না দিয়ে উল্টো খামারীদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করেছেন প্রতারক বাবুল হোসেন।

বাবুল হোসেনের প্রতারণার স্বীকার মণিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের আমজাদ হোসেন ফকিরের ছেলে আবু সাইদ, মৃত আনছার ফকিরের ছেলে আজিজুর রহমান, অনাদী মন্ডলের ছেলে অমৃত মন্ডল, মকবুল মোল্যার ছেলে আঃ রশীদ, এজের মোড়লের ছেলে হামিদ মোড়ল, মৃত ছাত্তার মোল্যার ছেলে হুমাউন মোল্যা। এ ছাড়াও অভয়নগর থানার বারান্দি গ্রামের মনছের মল্লিকের ছেলে জসিম মল্লিক ও আব্দুল গনি গাজীর ছেলে মোঃ অনিসুর রহমান। খামারীরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের কাছ থেকে ব্যাংক লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চেকের পাতা কৌশলে আদায় করে নেয়। কিন্তু অদ্যাবধি তাদের কোনো ব্যাংক লোন পাইয়ে দেয়নি বাবুল।

সহজ সরল ওই খামারীরা তার সাথে দীর্ঘদিন ব্যবসা করলেও কোনদিন লাভের মুখতো দেখেননি বরং দেনা হয়েছেন। তারপরও দেনার দায় মাথায় নিয়ে সামনে লাভের আশায় ব্যবসা চালাতে বাধ্য হয়েছেন। জানা যায়, প্রতি বছর হালখাতায় রশীদের মাধ্যমে সকল পাওনা পরিশোধ করেছেন তারপরও ৫/৬ জনের নামে চেক ডিজঅনার মামলা করে এবং মামলার সমন আসলে খামারীরা হতবাক হয়ে যায়। যার ফলে এদের মধ্যে থেকে ৪ জন খামারী তাদের টাকা পরিশোধের প্রমানসহ বাবুল হোসেন এর নামে মামলা করেছে বলে জানা যায়। আবু সাঈদ ফকির বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিস্ট্রেট মণিরামপুর আমলী আদালত, যশোর গত ২০/১১/২০২০ ইং তারিখে চেক ফেরত পাওয়ার জন্য উক্ত বাবুলের নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- সি আর ৫৭৫/২০ ইং এবং শহীদ ফকির, পিতা-আমজাদ ফকির এর নামে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালে গত ৩১/০৮/২০২০ইং তারিখে শহীদ ফকির বাবুল হোসেনকে লিগ্যাল নোটিশের জবাবও দেয়।

মামলায় উল্লেখ থাকে বাদি আবু সাইদ একজন স্বাক্ষর জ্ঞান হওয়ায় বিবাদী বাবুলের উপর বিশ^াস করে একটি জমির দলিল ও জনতা ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ মণিরামপুর শাখার হিসাব নং ১৫৯১৯/৯ এবং চেক নং ঝই-১০ ৬৩১৯৯৩৭ ও ৬৩১৯৯৩৯ অর্থাৎ ২ টি চেকের পাতা ও জমির দলিল বাবুলের নিকট জমা প্রদান সাপেক্ষে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। কারণ প্রতিশ্রæতি মোতাবেক আবু সাইদকে সহজে ব্যাংক লোন পাইয়ে দিবে। এভাবে পাঁচাকড়ি গ্রামের সহিদ ফকির এর নিকট থেকে জনতা ব্যাংক মণিরামপুর শাখার হিসাব নং ১৫৯১২/৯ এবং চেক নং ঝই-১০ ৬৩১৯৯৩৯। উল্লেখ্য আবু সাইদ ও সহিদ ফকির এর চেকের পাতা নং একই। ধুর্ত বাবুল হোসেন পাঁচাকড়ি গ্রামের আজিজুর ফকিরের নামেও গত ০২/১০/২০১৯ ইং তারিখে খুলনার বিজ্ঞ অতিঃ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালত “খ” অঞ্চলে চেক ডিজঅনার মামলা করে। যার নং সি আর- ৪০৮/১৯ ইং। একইভাবে অভয়নগরের আব্দুল গনির ছেলে মোঃ আনিসুর রহমানের নামেও ২৫/০৩/২১ তারিখে চেক ডিজঅনার এর লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। আনিসুর রহমান ইং ৩১/০৩/২১ তারিখে নোটিশ পেয়ে ০১/০৪/২১ তারিখে খুলনা জজ কোর্টের মাধ্যমে ওই নোটিশের জবাব দেন তার নামে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও প্রতারণামূলক।

সকল অভিযোগকারী জানান, দীর্ঘদিন বাবুল হোসেন এর সাথে ব্যবসা চালিয়ে আসছি কিন্তু তিনি আমাদের কাছে কোনো টাকা পাবেন না বরং তিনি আমাদের সহজ সরল পেয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। আমরা তার হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই এবং পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বাবুল হোসেন খামারীদের সাথে প্রতারণার কথা অস্বীকার করে বলেন, খামরীরা পাওনা টাকা দিবে না বলে আমার নামে উল্টো মামলা করেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন