খুলনা অফিস :
সুরক্ষা পোশাকের অভাবে করোনা ভাইরাসে অধিকহারে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হচ্ছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খুলনা বিএমএ নেতৃবৃন্দ। বৃহষ্পতিতে এক বিবৃতিতে খুলনা বিএমএ সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম, সাধারন সম্পাদক ডা: মেহেদী নেওয়াজ, কোষাদ্যক্ষ ডা: পরিতোষ কুমার বিশ্বাসসহ নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনায় ০৩ জন চিকিৎসকসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বা তার অধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একের পর এক লগ ডাউন হচ্ছে হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটতে পারে ।
খুলনা বিএমএ বারবার এ প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি । বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সমূহ নিম্ন মানের মাস্ক ও অসম্পূর্ন পিপিই সরবারহ করার সুযোগ পেয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসন ( মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর ) প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চাপ প্রয়োগ করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই অসম্পূর্ন ও মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য করেন।
প্রতিবাদ করায় কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান কে শাস্তি মুলক বদলি করা হয়েছে । ফলে এখন প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না । নিম্ন মানের পিপিই ও মাস্ক এর কারনে আক্রান্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সমূহ লক ডাউন হয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি অসংক্রমিত ব্যধিতে আক্রান্ত মুমূর্ষ ও সংকটাপন্ন রোগীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মানুষ থেকে মানুষ ছাড়ায় এবং বিশ্বময় জড়িয়ে পড়তে পারে এমন ঘোষনা আসার প্রায় ০৩ মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ বব্যস্থায় গ্রহন করেনি বা ব্যর্থ হয়েছে । বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জে এম আই এর তৈরি নিম্ন মানের মাস্কের গয়ে ঘ-৯৫ সিল মেরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতরণা করা হয়েছে । পরে ভ‚ল স্বিকার করে ঐ মাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে ।
রাষ্ট্র ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন শাস্তি মুলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বিষয়টি রহস্যময় থেকে গেছে। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার ও থাকার জায়গা ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে । মহামারির এই সংকট কালীন সময়ে বাড়ীর মালিক ও প্রতিবেশিরা করোনা আতঙ্কে চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত থাকায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও তাদের পরিবারের সাথে অমানবিক আচরন করছেন এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় তাদের মনবল ভেঙ্গে পড়ছে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সহ তিনটি সংস্থা তাদের জরিপে প্রকাশ করেছেন মান সম্মত পিপিই’র অভাবে চিকিৎসকরা মানসীক চাপে রয়েছেন এবং নিজেদের পরিবারের সুরক্ষার ব্যাপারে তারা আরো উদ্বিগ্ন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের আস্থা ফিরাতে তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন । অন্যথায় কোন প্রনোদনা বা শাস্তি মুলক ব্যবস্থা এই মহামারি নিয়ন্ত্রনে অগ্রভাগের সৈনিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের আস্থা ফিরাতে কাজে আসবে না ।
যার ফলে স্বাস্থ্য খাত অস্থির হতে পারে ঘটতে পারে স্বাস্থ্য বিপর্যয়। দেশের সকল মানুষদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করন কল্পে সর্বাগ্রে সংক্রমণ রোধ ও সংক্রমিতদের চিকিৎসার যাবতীয় উপকরনের ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থাগ্রহন করা প্রয়োজন । চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার ও থাকার জায়গা ব্যবস্থাপনায় বিরাজমান অস্থিরতা দূর করা প্রয়োজন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অসামান্য অবদান রেখেছেন ।
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতদের সহ দেশের মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করনে তারা অঙ্গিকারবদ্ধ । আমরা বিশ্বাস করি অবিলম্বে এই অব্যস্থাপনা দুর করে চিকিৎসার সুষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে এবং করোনা ভাইরাসের কমুনিটি সংক্রমণ রোধ করে লক ডাউন শেষে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে । করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সহ দেশের সকল অসুস্থ মানুষদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে, এই মহামারির বিরুদ্ধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষিত থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ আহবান জানান।