ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ
‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ অনেকটাই মলিন হতে বসেছে। বছরের পর বছর ইটভাটাগুলোতে নির্বিচারে খেজুর গাছকে জালানি হিসেবে ব্যবহার করায় তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে এর উৎপাদনে। ঝিকরগাছার গ্রাম গুলোতে শীতের এই ভরা মৌসুমেও সেভাবে মিলছে না রস আর গুড়। দু’একটি গ্রামে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা নিন্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই এবারের শীতে অনেকেই খেজুরের রস ও গুড়ের স্বাদ নিতে পারছেন না।
ঝিকরগাছার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অধিকাংশ গ্রামে এক সময় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু গত ১০/১২ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে ইটভাটায় জালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলে আংশকাজনক হারে তা কমে গেছে। বর্তমানে উপজেলার এমনও গ্রাম আছে যেখানে খেজুর গাছ নেই বললেই চলে।
খেজুর গাছ যখন বেশি ছিল তখন রস আর গুড় মানুষের নাগালে ছিল। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় খেজুরের রস গুড়ের দাম বৃদ্ধিও পেয়েছে। গত বছরও এ অঞ্চলে ১ ঠিলে (ভাড়) রস ৮০ থেকে ১শ টাকায় পাওয়াগেছে। কিন্তু এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ হতে দেড়শ টাকায়। অনুরুপ ভাবে গেল বছর ১ কেজি গুড় পাওয়া যেত ১২০ টাকা হতে দেড়শ টাকায়। অথচ চলতি শীত মৌসুমে সেই গুড় কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা হতে ৩০০ টাকা কেজি দরে। দাম বাড়ার কারণে সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষের খেজুরের রস ও গুড়ের স্বাদ নেয়া দুরুহ হয়ে পড়েছে। রস গুড়ের বাজার দর ভাল থাকায় বিছিন্নভাবে থাকা গাছ গুলো থেকে গাছিরা আগ্রহ সহকারে রস সংগ্রহ করছেন।
উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের রাজবাড়ীয়া গ্রামের গাছি মহাসিন আলী বলেন, তার পিতা ছিলেন এলাকার একজন নাম করা গাছি। শীত এলেই তিনি রস সংগ্রহে মেতে উঠতেন। বয়সের ভারে এখন পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। পিতার কাছ থেকে পাওয়া পেশাকে তিনি বেশ ভাল ভাবেই আগলে রেখেছেন। প্রতি বছর শীত এলে রস গুড় বিক্রি কওে তিনি বেশ ভালই লাভবান হন। মহাসিন আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ১২০ টিরমত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। দিনের বেশির ভাগ সময় এই কাজে তার সময় পার হয়ে যায়। ৫ বছর আগেও তিনি অন্তত ২শ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় রস সংগ্রহও বহুলাংশে কমেগেছে।
এই গাছি বলেন, বাজারে খেজুরের রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রিও বেশি, তাই দিন শেষে নিজের খাওয়া গুড়ও বাড়িতে থাকেনা। রস সংগ্রহ, সেই রস থেকে গুড় তৈরীতে এখন খরচ বেড়েছে, তাই অন্য বছরের চেয়ে এ বছর বেশি দরে গুড় বিক্রি করতে হচ্ছে।
খেজুরের রস ও গুড় আমাদের ঐতিহ্য তাই খেজুর গাছকে রক্ষা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন এই গাছি।
নির্বিচারে যারা খেজুরগাছ নিধোন করছে তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করা দরকার, পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মাঠে, পতিত জমি ও সড়কের পাশে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ ও তা সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মানুষ।
s