হোম বাংলাদেশ নড়াইলে ভাতার কার্ড ঘুষ দিয়ে মিললেও কেড়ে নেয় ঘুষখোর সমাজকর্মী হারুন

নড়াইলে ভাতার কার্ড ঘুষ দিয়ে মিললেও কেড়ে নেয় ঘুষখোর সমাজকর্মী হারুন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 79 ভিউজ

নড়াইল অফিস :

নড়াইলের কালিয়ায় পুরুলিয়া গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী ওহাব মোল্য ২ বছর ঘুরে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছেন। এরই মধ্যে একবছরের ভাতার ৯হাজার টাকা ব্যাংক থেকেই কেড়ে নিয়েছে ঘুষখোর সমাজকর্মী হারুন। ভাতার টাকা না পাবার যন্ত্রনায় নানা জায়গায় অভিযোগ করেও সমাধান পাননি তিনি।

ঘুষ ছাড়া সরকারী ভাতা মিলছে না এমন অভিযোগ আছে পুরো কালিয়া উপজেলা জুড়ে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, চাচুড়ি,পুরুলিয়া,বাবরা হাচলা আর মাউলী এই ৪ ইউনিয়নের দ্বায়িত্বে থাকা হারুন পুরো এলাকায় হয়ে উঠেছেন ভাতা’র মালিক। কখনো নিজে আবার কখনো ইউপি মেম্বরদের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে কার্ড দেয়া হয়। টাকা দিয়েও বছরের পর বছর ঘুরছে অসহায় ভাতা প্রার্থীরা। সরকারী সামাজিক সুরক্ষা ভাতা এখানে সমাজকর্মী আর জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার অস্ত্র হয়ে দাড়িয়েছে।
সরেজমিন পুরো কালিয়া এলাকায় প্রায় শতাধিক মানুষের কাছে গিয়ে পাওয়া গেছে সরকারী ভাতার নানা অনিয়মের তথ্য।
পুরুলিয়া গ্রামের মোদাচ্ছের মোল্যার একমাত্র ছেলে ৪৬ বছরের শারিরীক প্রতিবন্ধী ওহাব মোল্যা। ২৮বছর বয়সে হঠাৎ করে প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। প্রথমে তার ডান হাত, মুখ বেকে গিয়ে কথা জড়িয়ে যায়। অকেজো ডান হাত বাদ দিয়ে বাম হাতেই খাওয়া ও চলাচল। দশ বছর বিছানায় কাটিয়ে লাঠি ভর দিয়েই চলা শুরু হলে দেখাশোনার জন্য বিয়ে দেয় পরিবার। এক বছরের মাথায় অথর্ব ওহাবের সংসার ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী। দুই বোনের অন্যত্র বিয়ে হলে প্রতিবন্ধী ভাইকে দেখভাল করতে ছোট বোন রোকেয়া ভাইয়ের বাড়িতেই সংসার পাতে। রোকেয়ার স্বামী রিপন মটর সাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে সংসারের খরচ চালান।

ওহাবের বোন রোকেয়া জানায়, সমাজকর্মী হারুন ভাইয়ের কাছে গেলে সব কাগজপত্র নিলেন, কয়েকদিন পর বললেন অফিস ঠিক করতে ৬ হাজার টাকা লাগবে। দুই বছর ঘুরে আমার ভাইয়ের কার্ড হয়। এলাকার লোকের কাছ থেকে সুদে ৬ হাজার টাকা এনে হারুনকে দিয়েছি,এ অন্যায় আল্লাহ সহ্য করবে না।

প্রতিবন্ধী ওহাব জানান,ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরে আমার হাতে থাকা ৯ হাজার টাকাও থাবা দিয়ে কেড়ে নিলো হারুন। আমার তখন প্রচন্ড জ¦র,আমি হারুন কে বললাম,ভাই আমারে ঔষূধ কিনার জন্য ২হাজার টাকা দাও,তাও দিলো না,বললো পরেরবার আসলে তখন নিস। একথা বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো ওহাব মোল্যা।
শুধু এটাই নয়,ওহাবের বাবা মোদাচ্ছের মোল্যা মারা যাবার পর তার বয়স্ক ভাতার কার্ডটি সমাজকর্মী হারুন ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় পাশের ধনবান ইউসুফ মিনার কাছে।
২৫ বছর আগে বিধবা হওয়া ফতেমা ইউপি মেম্বর আর হারুন দুজনকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৩ বছর ধরে কার্ডের জন্য ঘুরছেন। সুফিয়া নামের আরেক বৃদ্ধা হারুনকে ৪ হাজার টাকা ঘুস দিয়ে পেয়েছেন কার্ড।
এদিকে টাকা দিতে না পারায় একই পাড়ার ৮৫ বছরের বৃদ্ধা ল²ী বেগম এর হয়নি ভাতার কার্ড। স্ংাবাদিক দেখে বৃদ্ধা ল²ী বেগম আকুতি করে বলেন“আমারে একটা ভাতার কার্ড দিবানা?। হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের ৬৫ বছরের জেলে অমর বিশ^াস ক্ষোভের সাথে বলেন,আমি গরীব মানুষ,টাকা কোথা থেকে দেব,আর টাকা না দিলে কার্ড হবে না।

সরকারী নিয়মে পুরুষদের ৬৫ আর নারীদের ৬২ বয়স হলেই বয়স্ক ভাতা পাবেন এই নিয়ম ভেঙ্গেই সুমেরু খোলা গ্রামের ৫৫ বছরের ত্রিনাথ দত্ত,হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের ৫০ বছরের রবীন্দ্রনাথ বিশ^াস ,৪৮ বছরের শৈলেন বিশ^াস, ৫৩ বছরের অসিত বিশ^াস হারুনকে টাকা দিয়ে পেয়েছেন বয়স্ক ভাতার কার্ড। এদের কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে রাজী হননি।

ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুনের কাছে প্রতিবন্ধী ওহাবের টাকা কেড়ে নেয়া সহ টাকা নিয়ে কার্ড করার কথা জিজ্ঞাস করলে তিনি ভাতার টাকা নেবার কথা অস্বীকার করে বলেন, ওহাব পাগল মানুষ সে যা বলেছে সব মিথ্যা। ইউনিয়ন পরিষদ তালিকা দেয় আমরা ভাতার কার্ড দেই এখানে টাকা নেবার কোন সুযোগ নাই।
বেদেপল্লীর বাসিন্দা মমতাজ বেগম জানান সুজল মেম্বর কে ৬হাজার টাকা দিলে আমার কার্ডটা হয়েছিল। কিন্তু ২হাজার টাকা বেশী পেয়ে আরেকজনের কাছে কার্ডটি বিক্রি করে দিছে। নানা জায়গায় অভিযোগ দেয়ায় সুজল মেম্¦র আমাকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবার হুমকী দিচ্ছে।
কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং উপজেলা ভাতা বিতরন কমিটির সদস্য সচীব রফিকুল ইসলাম বলেন,আমরা যে সব এলাকার অভিযোগ পাচ্ছি তা সমাধানের চেষ্টা করছি। জনপ্রতিনিধিদের উপর দায় চাপিয়ে তিনি বলেন,জন্মনিবন্ধন তারিখ পরিবর্তন করে দিলে কি করার আছে বলেন?
সমাজসেকবা অধিদপ্তরের ভাতার অনিয়ম প্রসঙ্গে উপ-পরিচালক রতন কুমার হালদার এর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভাই এই বিষয় নিয়ে আমরা কিছুটা বিব্রত। কথা বলা উপরের নিষেধ আছে,যা বলার জেলা প্রশাসক বলবে।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন,কালিয়া অঞ্চলে সরকারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ভাতার অনিয়ম তদন্ত চলছে। এ ক্ষেত্রে দোষী চেয়ারম্যান,মেম্বর কিম্বা সমাজকর্মী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন