মণিরামপুর, (যশোর):
যশোরের মণিরামপুরে ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠনসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শহীদ ইকবাল ও সাবেক সভাপতি মোঃ মুছা গ্রুপের নেতা-কর্মীরা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বে অর্থের মধ্যমে অযোগ্যদের নেতৃত্বে আনাসহ নানা ইস্যুতে ২০ বছর ধরে ইকবাল-মুছার বিরোধ নিরসনে বার বার ব্যর্থ হয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। অপরদিকে, দলটির ত্যাগী নেতা-কর্মীদের চোর অভিযোগ সঠিকভাবে কর্মী মূল্যায়ন না করায় ২০০৮ সালের পর থেকে দলীয় একটি কর্মসূচীও পালন হয়নি রাজপথে।
উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোঃ মুছা অনুসারীদের অভিযোগ ২০০১ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন স্থানীয় ক্ষমতার দাপটে একের পর এক পকেট কমিটি গঠন করেছেন। যা জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে কোন প্রতিকার হয়নি। এরই অংশ হিসেবে ইকবাল ও মুছা গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। তবে, শহীদ ইকবাল অনুসারীদের দাবী কোন পকেট কমিটি গঠন করা হয়নি। এক পর্যায় ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা হারানোর পর বিএনপি ছেড়ে মোঃ মুছা চলে যান এলডিপি নামক সংগঠনে। অবশ্য পরে তিনি বিএনপিতে ফিরে আসেন। ব্যক্তি স্বার্থের কারণে মুছা সাহেব দল ত্যাগ করলেও শহীদ ইকবাল হোসেন তা করেননি। দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর থেকে অদ্যাবধি একটানা আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও অপজিশনে থানা বিএনপি’র দলীয় কোন্দল নিরসনের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে তা বেগবান হয়ে প্রকাশ্যে রূপ নিতে যাচ্ছে।
জানাযায়, গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজপথে আসার একটি সুযোগ পেয়ে শহীদ ইকবাল ও মুছা গ্রুপের নেতা-কর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর মুহুর্তের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। যে কারণে, এখন মাঝে মধ্যে ঘরোয়াভাবে বিএনপি’র উভয় শিবিরের অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢিলে-ঢালা কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে, এক সময়ের রাজপথের বিএনপি এখন প্রায় বিকল হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মণিরামপুর উপজেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠন করার। এরপর পর্যায়ক্রমে যুবদল ও বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে।
আর এমন প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে ইকবাল ও মুছা গ্রুপের মধ্যে আরেকটি করে গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শহীদ ইকবাল পক্ষের রাজপথের ত্যাগী কর্মী ফিরোজ হোসেনসহ অনেকেই জানান, ইতিমধ্যে তারা খবর পেয়েছেন, ত্যাগী ও রাজপথের সাহসী কর্মীদের বাদ দিয়ে যুব ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। যে কারণে, বর্তমান তারা শতাধিক নেতা-কর্মী দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মোঃ মুছা গ্রুপের মধ্যেও। এই পক্ষের যুবদলী কর্মী সাইফুল ইসলামসহ অনেকে মন্তব্য করে বলেন, ব্যবসায় অর্জিত টাকা দিয়ে দলের পিছনে সময় ব্যয় করে থাকি। ফলে, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাথে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। মোঃ মুছা পক্ষের সদর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ডাঃ আলতাফ হোসেন বলেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করাসহ কর্মী মূল্যায়ন না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরজন্য তিনি জেলা বিএনপিকে দায়ী করেন।
একই গ্রুপের পৌর বিএনপি’র জাহাঙ্গীর বিশ্বাসহ অনেকেই জানান, ছাত্রদল হোক আর বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠন হোক যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন তারা। এদিকে, শহীদ ইকবাল পক্ষের ত্যাগী কর্মী ফিরোজ হোসেনসহ একাধিক কর্মী জানান, সিনিয়র কিছু নেতার অন্যায় সিদ্ধান্তে সাপোর্ট না দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, শুধু শহর কেন্দ্রীক নয়, দীর্ঘদিন ধরে শহীদ ইকবাল ও মুছা সাহেবের মধ্যে বিরোধের কারণে তার প্রভাব পড়েছে মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের মধ্যে। নানা কারণে, প্রায় রাজনীতি ছেড়ে দেয়া অনেক প্রবীণ ও ত্যাগী কর্মীরা ক্ষোভের সাথে জানান, ইতিপূর্বে বিএনপি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে তখন পৌর শহরে বসবাসকারী কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থ এবং আখের গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এমনকি নিজ দলীয় কর্মীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে তারা সুযোগ করে দিয়েছেন অন্য দলের নেতা-কর্মীকে।
তার পরেও প্রতিপক্ষ দলের হামলা-মামলার শিকার হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে অনেক কিছু মেনে নিয়েছেন তারা। গত একটি উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শীর্ষ এক নেতাসহ তার অনুসারীরা অন্য দলের এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট কেটে তাকে বিজয়ী করেন। বিনিময়ে ওই নেতাদের কোন সমস্যা না হলেও বিএনপি’র পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অগণিত নেতা-কর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। যে কারণে, বর্তমান দলটির ৭০ ভাগ নেতা-কর্মী বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ লালন করলেও তাদের মন্তব্য মুছা ও ইকবাল সাহেবের ডাকে তারা আর রাজপথে আসবেননা। জানতে চাইলে, প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পত্রিকায় নাম দিয়ে হামলা-মামলাসহ আর কালারিং করবেন না। তবে, যদি কোন দিন ভাল মানষিকতায় মুছা ও ইকবাল সাহেব এক হয়ে মণিরামপুরের বিএনপিকে রক্ষা করতে পারেন তখন ভেবে দেখব তাদের সাথে রাজনীতি করব কিনা।