হোম অন্যান্যসারাদেশ দেবহাটার খাল গুলো জবর দখল ও নেট-পাটায় জর্জরিত, বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে পানি নিষ্কাশন, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

দেবহাটার খাল গুলো জবর দখল ও নেট-পাটায় জর্জরিত, বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে পানি নিষ্কাশন, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 75 ভিউজ

মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা :

দেবহাটায় দখলদার চক্রের জবর দখল এবং নেট-পাটায় বর্তমানে শ্বাসরুদ্ধ ও গতিহীন হয়ে পড়েছে উপজেলাতে প্রবাহিত সরকারী খাল গুলো। এতে করে একদিকে প্রতিনিয়ত চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আর অন্য দিকে পানির প্রবাহ না থাকায় খালের তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা হারানোর সাথে সাথে গতিহীন হয়ে পড়ায় এলাকা ভিত্তিক ক্রমশ বাড়ছে জলাবদ্ধতা।
ফলে চলমান বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই উপজেলার নিন্মাঞ্চল গুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারনে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সাধারন মানুষ ।

সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন কর্তৃক জেলার অভ্যন্তরীন সকল সরকারী খালের ইজারা বাতিল সহ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তথা খাল গুলোর পানি প্রবাহের ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ নেট-পাটা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হলেও, দেবহাটার খাল গুলো এখনও রয়ে গেছে অবৈধ দখলদার আর নেট-পাটার কবলে। শুধু তাই নয়, পারুলিয়া-সখিপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সাপমারা খালের বিভিন্ন স্থানে রাতদিন সুবিশাল নেটজাল পেতে রাখায় সম্প্রতি পুনঃখননকৃত খালটিতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া কুলিয়া ইউনিয়নের লাবণ্যবর্তী খালের সাথে সংযুক্ত গরুমারা খাল ও বাধের মুখ নাম স্থানে ইজারার নাম করে খালের মুখে মাটির বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীরা।

বছরের পর বছর ইজারাদার চক্রের স্বেচ্ছাচারিতা, জবর দখলকারীদের খাল দখল প্রবণতা ও খালে অজস্র নেট-পাটা বসিয়ে সম্পুর্ন ব্যাক্তি স্বার্থে অবৈধভাবে মাছ চাষ করা হলেও তাদেরকে উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেবহাটার এসকল খাল গুলো। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন লাবণ্যবতী খালের ওপরেই নির্ভরশীল। যুগ যুগ ধরে লাবণ্যবতী খালের মাধ্যমে বহু এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে আসছে ইছামতি নদীতে। লাবন্যবতী খালটি হাড়দ্দাহ স্লুইজ গেইট থেকে ইছামতি নদীর সাথে সংযুক্ত।

আবার সাতক্ষীরার প্রানসায়ের ও কলকাতা খাল থেকে শাখা খাল হিসেবে চরবালিথা খাল, কদমখালী খাল, ঝিনুকঘাটা খাল এসে মিশেছে লাবন্যবতীতে। আবার কুলিয়া বাধের মুখ থেকে লাবণ্যবতীর দুটি শাখা কামটপাড়া সুবর্নাবাদ ও শশাডাঙ্গা হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পাশ্ববর্তী এলাকা গুলোতে। লাবন্যবতী খালের কামটপাড়া এলাকার খালটির একটি শাখা মুখ ইজারার নামে মাটির বেড়ীবাধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে ঘেরে পরিনত করেছে স্থানীয় ময়নুদ্দীনের ছেলে ইব্রাহিম। আর লাবণ্যবতীর অন্যান্য শাখা খাল গুলোর মধ্যে সুবর্নাবাদ, টিকেট, পুটিমারী হয়ে প্রবাহিত খালের কয়েক মিটার অন্তর শত শত অবৈধ নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষের নামে খালের পানি প্রবাহ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করে চলেছে এলাকাগুলোর শতাধিক প্রভাবশালী, সুবিধাবাদীরা। দেবহাটার পারুলিয়া-সখিপুরের সাপমারা খালটি থেকে বেশ কয়েকটি শাখা হলদারখালী, চেংমারী, মাঝেরহাটি হয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে ওই শাখা খালগুলো মৎস্য ঘেরে পরিনত হয়েছে।

এসব এলাকার দখলদাররা নেটপাটা বসিয়ে এবং খাল বন্ধ করে তা অনেকটা মৎস্য ঘেরে পরিনত করেছে।
অপরদিকে দেবহাটার চরশ্রীপুর ইছামতি নদী থেকে সদর ইউনিয়নের গোপাখালী হয়ে সখিপুর ইউনিয়নের কেওড়াতলার মধ্য দিয়ে তিলকুড়া পর্যন্ত প্রবাহিত মতিঝিল খালটিও ইজারাদার নামের ভুমিদস্যুদের কবলে পড়েছে। খালটির বিভিন্ন স্থানে এপার থেকে ওপার পর্যন্ত অবৈধ নেট-পাটা দিয়ে এবং মৎস্য আহরণের নেটজাল বসিয়ে খালটির পানি প্রবাহ ব্যাহত করে চলেছে অসাধু একটি চক্র। তাছাড়া খালের দুপাশ ভরাট করে অবৈধ জবর দখলের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।

তাছাড়া সখিপুরের মাঘরী চন্ডীপুরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত মাঝের খাল এবং সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর হয়ে রত্নেশ্বরপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল দুটির বিভিন্ন স্থানের নেট-পাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। শুধু পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্থ নয়, রত্নেশ্বরপুরের শেষের দিকে খালটিকে স্থানীয় প্রভাবশালী ওয়াহেদ ঢালী ও তার ছেলে সুজা, মনিরুল সহ বেশ কয়েকজন খালটির মুখ মাটির বাঁধ দিয়ে সম্পুর্ন খালটি মৎস্য ঘেরের মধ্যে দখল করে নিয়েছে। সবশেষে রয়েছে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ধাঁপার খাল। খালটি বয়সা, বাবুরাবাদ, ঢেপুখালী, দাইবুড়ি, সন্যাসীতলা, বড়হুলা, কামিনীবসু সহ এলাকা ভিত্তিক একাধিক নামে প্রবাহিত। নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পানি এই খালটির মাধ্যমে সখিপুরের সাপমারা খালের মধ্যে নিষ্কাশিত হয় যুগ যুগ ধরে। কিন্তু অবৈধ নেট-পাটা, দখলদারিত্ব আর ইজারার নামে মৎস্য ঘের হিসেবে বেশ কিছু প্রভাবশালীর ব্যবহারের কারনে নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি বর্তমানে চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে খালটির পাশ্ববর্তী বেশ কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ধারা।

দীর্ঘদিন ধরে দেবহাটা উপজেলার এসকল সরকারী খাল প্রভাবশালী, সুবিধাবাদীদের অপব্যবহারের ফলে নাব্যতা হারাতে বসলেও, খালগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও নেট-পাটা অপসারনে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ক্রমশ মানুষের মাঝে খাল দখলের প্রবনতা বেড়েই চলেছে।
আর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় খালগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে সেগুলো নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে তীব্য জনদুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছে সাধারন মানুষ। তাই অবিলম্বে খাল দখলের মহোৎসব বন্ধ সহ অবৈধ নেট-পাটা অপসারনে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন