অনলাইন ডেস্ক :
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজ দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। যদিও প্রতিষ্ঠার এক দশকে এসে এর বিচার কার্যক্রম আলোচনায় নেই বললেই চলে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের রাজাকারদের বিচার কাজ চলছে। এ ছাড়া তদন্ত কাজ এবং আসামি গ্রেপ্তারও অব্যাহত রয়েছে।
তবে মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। গণহত্যা দিবস ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার পূর্বঘোষিত সব ধরনের কর্মসূচিও স্থগিত রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪১ মামলায় ৯৬ যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হয়েছে।
নিষ্পত্তি হওয়া এসব মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৭৬৩ জন। এর মধ্যে নারী সাক্ষী রয়েছেন ১৫৩ জন। আরও ৩৬ মামলায় এক হাজার ৯৪ সাক্ষীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় ধর্ষণের শিকার কয়েকজন নারী সাক্ষীও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন সংস্থার তথ্যমতে, ১০ বছরে ৪১ মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনালে ৯৬ যুদ্ধাপরাধীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ফাঁসি) হয়েছে ৭০ জনের। আমৃত্যু সাজা হয়েছে ২৫ জনের এবং ২০ বছর সাজা হয়েছে একজনের। সর্বোচ্চ আদালতে মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পর সাজা কার্যকর হয়েছে ছয় যুদ্ধাপরাধীর। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ২৯টি আপিল।
বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে আরও ৩৬টি মামলা, যার আসামির সংখ্যা ২৩৭ জন। ৭৭টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৬১ জন আর পলাতক রয়েছে ১৪৪ জন। বর্তমানে জামিনে আছে চারজন। গত ১০ বছরে মারা গেছে ১৯ আসামি। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, ধর্মান্তরিত, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের আরও ছয় শতাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা রয়েছে।
দশ বছরে এসে বিচার প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সমকালকে বলেন, বিচারে আগে যে গতি ছিল, তা বর্তমানে অনেকটাই শ্নথ হয়ে পড়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ৫০০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার চললেও খুব কমসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর চার-পাঁচটি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে এই প্রসিকিউটর বলেন, ‘বর্তমানে ছয় শতাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে কমপক্ষে আরও ১৫০ বছর লাগবে। কাজে গতি আনতে হলে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন। তাছাড়া আগামী ১০-১২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গেলে সাক্ষীদের হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন ট্রাইব্যুনাল এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিচার সম্পর্কে জানাতে সরকারের উচিত এখনই ট্রাইব্যুনালের বিচারের দলিল ও নথিপত্র আর্কাইভে সংরক্ষণ করা।’
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার একটি বড় অর্জন বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাননান খান বলেন, গত ১০ বছরে সফলতা এসেছে শতভাগ। নিজস্ব আইনে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার মধ্যে দিয়ে এই আইন ও ট্রাইব্যুনাল অন্য সব দেশের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সমকালকে বলেন, নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ট্রাইব্যুনাল এই জায়গায় পৌঁছেছে। স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দায়িত্ববোধ বজায় রেখে গত ১০ বছরে এই ট্রাইব্যুনাল সর্বাঙ্গীণভাবে সফলতা অর্জন করেছে।
সূত্র-সমকাল