রিপন হোসেন সাজু:
যশোরের মনিরামপুরে বোরো মৌসুম শুরুতেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। সারের প্রকারভেদে প্রতি কেজি সার ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। যার কারনে জলাবদ্ধতায় আমন বিপর্যয়ের পর বোরো ব্যাহত হওয়ার শস্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকা দরে নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ডিসেম্বর মাসে ইউরিয়া ৭শ ৭৭, টিএসপি ৫শ ৪৬, ডিএপি ১৪শ ৭০ ও এমপিও ৫শ ৪৮, জানুয়ারী মাসে ইউরিয়া ২১শ ২১, টিএসপি ৪শ ৪১,ডিএপি ১৩শ ৪৪ ও এমওপি ৭শ ২৬ ও ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু ইউরিয়া ২২শ ৫ মেট্রিক টন সার সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ সার ব্যবসায়িরা কৃষকের বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে সংকটের কথা বলে বাড়তি দাম নিচ্ছে। তবে উপজেলায় বিভিন্ন এরাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাট-বাজারে ইউরিয়া সার ২৭ থেকে ২৯ টাকা, ট্রিপল সুপার মরস্ক ফসফেট (টিএসপি) ২৭ থেকে ৩২ টাকা, ড্রাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ২৩ টাকা এবং মিউরেট অব পটাশ ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি কিছু পরিবেশকেরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সার বিক্রি করলেও বাইরের খুচরা সার বিক্রেতারা ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছেন কৃষকদের কাছ থেকে। আবার খুচরা ব্যবসায়িদের দাবী, সরকারি নির্ধারিত দামে পরিবেশদের কাছ থেকে সার না পেয়ে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারনে আমরা কৃষকের কাছ থেকে দুই এক টাকা বেশি নিচ্ছি। কৃষকেরা জানান, আমন মৌসুমে তারা যে বাড়তি দামে সার কিনেছেন। এখনো সেই চড়া দামেই সার কিনতে হচ্ছে। বোরো মৌসুমেও যদি এভাবে বেশি দামে সার কিনতে হয়। তাহলে তারা আর ভাল ফসল ফলাতে পারবেন না। আর এভাবে সার কিনতে গিয়ে কৃষকেরা ঠকলেও সরকারিভাবে উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। বাজার তদারকিতেও নেই কোনো উদ্যোগ তাদের। দত্তকোনা গ্রামের মিন্টু, আসাদুজ্জামান, নেহালপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর, দূর্বাডাঙ্গা গ্রামের হাচেন আলী জানান, আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এলাকার একটি দোকান থেকে ইউরিয়া কিনেছি ২৯ টাকা, টিএসপি কিনেছি ৩৩ টাকা, ডিএপি ২৫ টাকা দরে কিনিছি। এতে সারের দাম বেশি হল না? আসানুর রহমান বুলি নামে চিনাটোলা বাজারের সারের পরিবেশক জানান, এ মাসে শুধু ইউরিয়া সারের বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো কৃষকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রিও করা হচ্ছে। তবে টিএসপির একটু সংকট পাচ্ছি। বেশী দামে কোন সার বিক্রি করা হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুচরা সার বিক্রেতা জানান, আমাদের ইউরিয়ার কেজি ২৮ টাকা, টিএসপি ৩১ টাকা, ডিএপি ২৩ টাকা ও পটাশ ২২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবহন খরচও আছে। তাই দুই-চার টাকা লাভ না করলে চলব কী করে। তাই একটু বেশী নেওয়া পড়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, সার বেশী দামে বিক্রির প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এবার উপজেলায় ২৮ হাজার ৩শ ৫০হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ইতিমধ্যে ৭০% জমিতে বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। এই মুহুতে কেউ সারের বেশী দাম নিলে দ্রæত বাজারে অভিযান চালানো হবে।