আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা জনপ্রিয় কন্টেন্ট শেয়ারিং অ্যাপ টিকটককে রক্ষা করেছেন দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হস্তক্ষেপ না করলে গতকাল রোববারই যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যেতো টিকটক।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ৯০ দিন সময় চান তিনি। এনবিসিকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে আমাদের আর একটু সময় নেওয়া উচিত। সেটা ৯০ দিন হতে পারে; কারণ এই সময়সীমা যথাযথ।”
পরে রোববার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমি চাইব এই অ্যাপটির ৫০ শতাংশ মালিকানা যেন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকে।”
প্রসঙ্গত, চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কন্টেন্ট শেয়ারিং অ্যাপ। প্রায় ৩৪ কোটি মানুষ অধ্যুষিত এই দেশটিতে টিকটক ব্যবহারকারীদের মোট সংখ্যা ১৭ কোটি। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক, তরুণ-তরুণী, বয়স্ক— সব বয়সী লোকজন রয়েছেন।
অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাও রয়েছেন ব্যবহারকারীদের এ তালিকায়। অ্যাপটি বন্ধ হয়ে গেলে তারা গুরুতর লোকসানের সম্মুখীন হবেন।
২০২১ সালে টিকটকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের অভিযোগ ছিল। তবে টিকটক এবং অ্যাপটির মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স বরাবরই এ অভিযোগ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল ‘প্রটেকটিং আমেরিকানস ফ্রম ফরেন অ্যাডভারসারি কন্ট্রোলড অ্যাপলিকেশন অ্যাক্ট’ নামের একটি বিলে সই করলে যুক্তরাষ্ট্রে হুমকির মুখে পড়ে টিকটক।
জো বাইডেনের করা আইনটিতে বলা হয়, চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স টিকটকে তাদের অংশীদারত্ব ছয় মাসের মধ্যে কোনো আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেবে, নয়ত যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হবে।
টিকটক ওই আইন আটকাতে ৭ মে আদালতে যায়, তাদের আবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আইন বাকস্বাধীনতার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এরপর ২ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র সরকার টিকটকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, চীনা এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি অবৈধভাবে শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার চেষ্টা করলে তাতে সাড়া দিচ্ছে না।
৬ ডিসেম্বর ফেডারেল আপিল আদালত টিকটকের মামলা খারিজ করে দেয়। ফলে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বাইটড্যান্সের শেয়ার বিক্রি না করলে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরো জোরালো হয়।
টিকটক নিয়ে শুক্রবার দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বাইডেনের করা আইনকে সমর্থন দিলে দেশটিতে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। গতকাল রোববারই যক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল এ অ্যাপটির।
তবে এনবিসিতে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার এবং ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টের পর আর বন্ধ হয়নি টিকটক; বরং রোববার এক বার্তায় অ্যাপটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি। তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তা রয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। টিকটক বন্ধ হয়ে গেলে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।”
সোমবার ট্রাম্পের দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে টিকটকের সিইও শো জি চিউ উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।