অনলাইন ডেস্ক:
‘অন্তর্বর্তী সরকার প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টরের সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে সেভাবে মনোযোগ নেই’, বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইস ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাংকিং খাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অন্য যেসব পদক্ষেপ, তার মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। এমনকি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও স্পষ্ট নয়।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও বিআইসিসিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সিম্পোজিয়ামে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট নিয়ে আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টর সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে সেভাবে কোনও মনোযোগ নেই। এই সরকারের অর্থনৈতিক মেন্যুফেস্ট নেই। এই সরকার কী ধরনের অর্থনৈতিক অবস্থা রেখে যাবে, তা স্পষ্ট না।’
অবিবেচ ভাবে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ দেশের প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। আমরা মধ্যম মেয়াদি ফাঁদে ঢুকে গেছি। এই অবস্থায় আমরা আশ্চর্য হয়ে গেছি যে, কী অবিবেচকভাবে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
সিনিয়র এই অর্থনীতিবিধ বলেন, ‘কোনও একটি দেশে যদি কর সংগ্রহ করে চায়, তবে তাকে ক্রমান্বয়ে প্রত্যক্ষ করের কাছে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আমরা দেখলাম না কোনও প্রত্যক্ষ কর আহরণের কোনও পরিকল্পনা। যারা ট্যাক্স দেয় না, তাদের প্রতি কী আচরণ করা হবে, তার কোনও পরিকল্পনা দেখলাম না। আপনারা পরোক্ষ করের দিকে আগে গেলেন প্রত্যক্ষ কর বাদ দিয়ে। এটা আমাদের চিন্তিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকি। গ্যাসের সরবরাহ, আগামী বোরো মৌসুম এবং গরমের মধ্যে জ্বালানি পরিস্থিতি আরও জটিল হবে এরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
এরকমভাবে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে রাজস্ব ব্যয় কী দাঁড়াবে, সেখানে ভর্তুকির পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ওই ভর্তুকির কে কত পাবে? কারণ যদি সরকারের ব্যয় সংকোচন করতে হয়, সেই আলোচনা আমরা দেখলাম না।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে সরকার ব্যয় বাড়াবে কিন্তু সেই ব্যয়ের কাঠামো কী হবে, কে কীভাবে পাবে— সেই প্রশ্ন আমাদের মনে রয়ে গেছে। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি দূর করতে পারছে না সরকার। ফলে এখনও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা।’
অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কারের পক্ষের মানুষ ধৈর্য হারা হবে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চাই, তারা ধৈর্য হারা হয়ে যাবে। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকেও সরে যেতে পারে।’
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক আশিক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।