অনলাইন ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে পুলিশ চেকপোস্টে ব্যারিকেড ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক বুয়েট শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই জন। তারাও বুয়েট শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় মামলা ও প্রাইভেট কারে থাকা তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্রাইভেটকার আরোহীরা মদ্যপ ছিলেন। উদ্ধার করা হয়েছে মদের বোতলও।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের এক নম্বর সেক্টরে বালু ব্রিজের সামনে চেকপোস্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম মোহতাসিন মাসুদ। তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার কুচিয়া মিয়াবাড়ি এলাকার মাসুদ মিয়ার ছেলে। মাসুদ বুয়েটে সিএসই ২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গুরুতর আহতরা হলেন- একই ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান খান।
নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে মাসুদ তার দুই সহপাঠীকে নিয়ে পূর্বাচল নীলা মার্কেট এলাকায় ঘুরতে আসেন। রাত তিনটার দিকে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওয়া হন। ওই এলাকায় চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। এসময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট চেকপোস্টের ব্যারিকেড ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মাসুদের মৃত্যু হয়। বাকি দুই জন গুরুতর আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার এবং আহত দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে এ লেভেলের শিক্ষার্থী মুবিন আল মামুন, তার বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় প্রাইভেটকার তল্লাশি করে একটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে গ্রেপ্তাররা গাড়ি চালানোর সময় মদ্যপ ছিলেন। তাদের ডোপ টেস্ট করা হবে।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা মাসুদ মিয়া বাদি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন এবং গ্রেপ্তারদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এএসপি মেহেদী ইসলাম।
এদিকে মৃত্যুর খবর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী আটকদের শাস্তির দাবিতে রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান নেয়।
অপরদিকে পূর্বাচলে সহপাঠীর মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ ছয় দফা দাবিও জানান তারা।
দাবিগুলো হলো-
যেকোনও মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা
আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদি পক্ষকে বহন করতে হবে
নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে
তদন্ত কার্যক্রমে বাধা দেওয়া চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে
আহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং
সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে যথাযত ভূমিকা রাখতে হবে।
আহত অমিতের বরাত দিয়ে তারা বলেন, পুলিশের সঙ্কেত পেয়ে তারা বাইক থামিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিল। আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি, এই ঘটনায় অভিযুক্ত চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
তারা আরও বলেন, অভিযুক্ত গাড়িচালকের বাবা একজন প্রভাবশালী ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল। তার কারণে আমাদের এক ভাইকে প্রাণ দিতে হলো। আমাদের আরও দুই ভাই গুরুতর আহত। এদিকে গাড়িচালকের ক্ষমতাশালী আত্মীয়রা মামলার মোড় ঘোরানোর, এমনকি মামলা যাতে না নেওয়া হয়, তার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত।