জাতীয় ডেস্ক:
চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইউনুছের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কায়েসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম।
২০০৯ সালে মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় টঙ্গী থেকে কমিউনিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রসু খাঁ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এসময় রিমান্ডে সে নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রসু খা’র ১১টি ধর্ষণ ও খুনের কথা ওঠে আসে।
রসু খাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে খুলনার পোশাককর্মী শাহিদা হত্যা মামলায় প্রথম মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুণাভ চক্রবর্তী রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাতে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের নির্জন মাঠে পারভীন আক্তার নামে এক নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এই মামলায় চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক আবদুল মান্নান ২০১৮ সালের ৬ মার্চ রসু খা ও তার ভাগ্নে জহিরুল ইসলামসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরবর্তীতে, এই রায়ের ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয় সে। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। ১০১ নারীকে খুন করে সিলেটের মাজারে গিয়ে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছার কথাও পুলিশকে জানায় রসু খাঁ।
রসু যাদের হত্যা করেছে, তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। রসু হত্যার জন্য নারী গার্মেন্টসকর্মীদের বেছে নিতেন। ভালোবাসার অভিনয় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ঢাকার সাভার ও টঙ্গী এলাকা থেকে চাঁদপুরে নিয়ে যেতেন তিনি। সেখানে ধর্ষণের পর হত্যা করতেন তাদের। হত্যার শিকার এসব হতভাগ্য মেয়ের অধিকাংশেরই সঠিক নাম-ঠিকানা বা পরিচয় আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রসু খাঁর বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা করা হয়। এর ভেতর নয়টি হত্যা এবং অপরটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।