জবি প্রতিনিধি:
সরকারী চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে দুই ঘন্টা পর অবস্থান ত্যাগ করেন তারা।
সোমবার (০৮ জুলাই) দুপুর তিনটার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় তাঁতিবাজার মোড়, বংশাল ও ফুলবাড়িয়ায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে তিন দফায় পুলিশ তাদের বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে জিরো পয়েন্ট অভিমুখে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে চারটায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড়ের চারপাশে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় বসে শ্লোগান দিতে থাকেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় জিরো পয়েন্ট মোড় ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থিত সচিবালয়ের পার্শ্ববর্তী রাস্তা সহ আশপাশের সবগুলো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের মুখে ছিলো প্রতিবাদী গান ও কবিতা আবৃত্তি।
এ সময় জবি শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, আমরা কারও শত্রু হতে এখানে আসিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো, বৈষম্যের বিরুদ্ধে চেতনা। বাঁধা আসবে, কিন্তু সেই বাঁধাকে সুশৃঙ্খলভাবে ও নৈতিকভাবে পরাজিত করতে হবে। এভাবেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
অপর শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমাদের লড়াই হবে কোটার বিরুদ্ধে। আমাদের লড়াই হবে কোটার পক্ষের অপশক্তির বিরুদ্ধে। কোটায় যদি রাখতে হয়, তাহলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। পড়াশোনা করে কী হবে?
অন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শাহীন আলম বলেন, সরকারী চাকরির কোটা বাতিল না করলে বেঁচে থাকায় তো বৃথা। বেকার থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। আমরা গণ মানুষের জন্য আজকে মাঠে নেমেছি। গণ মানুষ আমাদের পাশে আছে। আপনারা আমাদের দাবি মেনে নিলে ক্লাসে ফিরে যাবো।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন বলেন, যতদিন আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন রাজপথে থাকবো। সবশেষে তিনি আগামীকাল বিকাল ৩ টায় সবাইকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদী মিছিলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যয়’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, আঠারোর হাতিয়ার’, গর্জে উঠো আরেক বার’, কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘মেধাবীরা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ শ্লোগান দেয়।
এদিকে অবরোধে রাজধানীর সচিবালয়, মতিঝিল, পুরানা পল্টন ও তাঁতিবাজারগামী যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে। অনেককে পায়ে হেঁটে গুলিস্তানের জিরো মোড় পার হতে দেখা যায়। এতে পুরো এলাকা জুড়ে সড়কে স্থবিরতা তৈরি হয়, মুহূর্তেই থমকে যায় নগরবাসীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।
এ সময় রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ব্যবসায়িক কাজে চিটাগাং রোড থেকে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলাম। এক ঘন্টা অপেক্ষা করেছি। ঐদিক দিয়ে আবার শাহবাগ মোড়ও ব্লগ। বাধ্য হয়ে এখন চিটাগাং রোড়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার গাড়িও পাচ্ছি না।
সচিবালয়ের অপর এক নারী কর্মচারী জায়েদা বেগম বলেন, অফিস থেকে বের হয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করেও চাঁনখারপুল যাওয়ার কোন বাস পেলাম না। অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের জিরো পয়েন্ট মোড় ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছেনা। হেঁটে রওয়ানা হতে হচ্ছে।