আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী আইনজীবী সালমান আকরাম রাজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নির্বাচনে অনিয়ম ও ফল কারচুপির বিরুদ্ধে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) লাহোরে বিক্ষোভকালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত সপ্তাহের নির্বাচনে তিনি লাহোরের এনএ-১২৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন।
বিক্ষোভ থেকে তাকে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পিটিআই। সেই সঙ্গে এ ঘটনাকে ‘অত্যন্ত লজ্জার ও জঘন্য’ অভিহিত করে তাকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।
সালমান আকরামকে গ্রেফতারের মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করেছে পিটিআই। ভিডিওটি শেয়ার করেছেন খ্যাতনামা সাংবাদিক হামিদ মীরও। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভের ভিড়ের মধ্য থেকে সালমানকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এর মধ্যেই সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, তারা আমাকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করছে। আমি জনগণের সঙ্গে আছি এবং সত্যের জন্য আমার আওয়াজ তুলতে থাকব।
গত সপ্তাহে (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা ও নজিরবিহীন দমনপীড়ন সত্ত্বেও জয় পেয়েছে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, ৯২টি আসন জিতেছে তারা।
অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৫ ও ৫৪টি করে আসন পেয়েছে। দল দুটি এখন জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কিন্তু বেশি আসন পেয়েও সরকার গঠন করতে পারছে না পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা।
পিটিআই বলছে, তাদের প্রার্থীরা প্রকৃতপক্ষে ১৭৭টি আসনে জয় পেয়েছে। এর মধ্যে ৯২টি আসনের জয় স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকিগুলোতে ‘পরাজিত’ দেখানো হয়েছে। শুধু পিটিআই নয়, জামায়াতে ইসলামী (জেআই) ও জমিয়ত উলামা ইসলামও (জেইউআই-এফ) ফল কারচুপির অভিযোগ তুলেছে।
কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিক্ষোভ করছে পিটিআই নেতাকর্মীরা। শনিবারও পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শহর থেকে শহর, প্রদেশে থেকে প্রদেশ। লাখ লাখ জনতা এসব বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, শনিবার দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়ায় ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বের হবার জন্য আহবান জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসলামাবাদজুড়ে টহল বাড়ানো হয়েছে এবং চেকপয়েন্টগুলোতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য পুলিশ শহরজুড়ে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বেশিরভাগ শহরে টহল বাহিনী নামানো হয়েছে।
বিক্ষোভ থেকে ভোট কারচুপির বিচারের দাবি জানান পিটিআই নেতারা। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর সমাধান হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দলের নেতা হাম্মাদ আজহার। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশস্থলের নাম ঘোষণা করেছে পিটিআই। তাদের ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠায় অশান্ত হয়ে উঠছে দেশটির পরিস্থিতি।
পাকিস্তানে নির্বাচনের দিন বন্ধ ছিলো ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবা। ফল দেয়া হয় তিন দিন পর। এরপরই ভোটের দিন কারচুপি ছাড়াও ফল পাল্টে দেয়ার মতো জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।
নির্বাচনের পর থেকেই দেশে-বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে পাকিস্তান। ভোট কারচুপি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ সব মিত্ররা।