শিপলু জামান, ঝিনাইদহ :
এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।প্রথম দেখায় জানা জায়নি মেয়েটা কথা বলতে পারে না ।পরে যখন জানা যায় ,ততদিনে ছেলেটা মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছে ।এ সময় ছেলেটি তার পরিবারকে জানালে বাঁধ সাধে ছেলের পরিবার ।কারন ,মেয়েটি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মেয়ের মাকে বহুপূর্বে ত্যাগ করেছিল মেয়ের বাবা ।এসবে কর্নপাত না করে নিজ পারিবারকে বোঝায়ে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েটিকেই বিয়ে করে ছেলেটি ।গল্পটা এখানে শেষ না ,বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েটাকে বিয়ে করে শ্বশুড়বাড়ির অসহায় শ্বাশুড়ি ও নিজ সন্তানদের দেখাশোনা করছেন তিনি ।তখন থেকে এখন পর্যন্ত এক যুগের সুখের সংসার এ দম্পত্তির ।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন মাধ্যমিকে পড়–য়া থাকাকালীন ,পাশের হাজিপুর মুন্দিয়া গ্রামের পিংকী খাতুনকে দেখেন ।প্রথম দেখায় প্রেম ।অথচ তখন জানা হয়নি মেয়েটি কথা বলতে পারে না ।পরে মেয়ের বান্ধুবীদের কাছ থেকে জেনেও নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন দেলোয়ার হোসেন ।ততদিনে পিংকী খাতুনও দেলোয়ার হোসেনকে ভালবেসেছেন ।যা পিংকির বান্ধুবীদের মাধ্যমে দেলোয়ার হোসেন জানতে পারেন ।এরপর যত বিপত্তি ,ঘটনা জেনে বেকে বসে দেলোয়ার হোসেনের পরিবার ।তবু ভালবাসার মানুষটিকে আপন করে নিতে দেরি করেননি দেলোয়ার হোসেন ।নিজ পরিবারের বাঁধা পেরিয়ে ,পিতৃ হারা বাকপ্রতিবন্ধী পিংকি খাতুনকে বিয়ে করেন দেলোয়ার হোসেন । বাকপ্রতিবন্ধী পিংকী খাতুনকে বিয়ে করে অসহায় শ্বাশুড়ি ও নিজ সন্তানদের দেখাশোনা করছেন প্রায় ১২ বছর ।এখন এ দম্পত্তির তিন সন্তান ।বড় মেয়ে হ্যাপি (৮) শারিরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি দেলোয়ার হোসনে ।পরে এ দম্পত্তির কোল আলো করে আসে পুত্র অভি (৫) ও আরেক মেয়ে নূর ।
দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ি কুলসুম বেগম জানান ,আমার মেয়ের বয়স যখন ১১ মাস তখন থেকে আমি বাবার বাড়িতে থাকি ।আমার মেয়ের ১৭ বছর হলে দেলোয়ার বিয়ে করে ।সে হয়তো মায়ায় পড়ে আমার মেয়েকে বিয়েকে বিয়ে করেছে ।আমার জামাই কোনদিন আমাকে যৌতুকের চাপ দেইনি ।সংসারে কষ্ট থাকলেও আমরা অনেক সুখি ।
বাকপ্রতিবন্ধী পিংক খাতুনকে ভালবেসে বিয়ে করা দেলোয়ার হোসেন বলেন ,আমি প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে বিয়ে করেছি ভালবেসে।সে কথা বলতে পারেনা ।আমি যখন স্কুলে লেখাপড়ি করি ,তখন তার সাথে আমার পরিচয় হয়।সে আমাদের স্কুলে ঘুরতে এসেছিল ।অবশ্য তখন আমি জানতাম না সে বাকপ্রতিবন্ধী ।এরপর আমি পারিবারের সবাইকে বুঝিয়ে তাকে বিয়ে করি । আমার শ্বাশুড়ি একজন বিধবা মহিলা ।আমি বউ জন্ম নেওয়ার পর আমার শ্বশুর আমারে শ্বাশুড়িকে তালাক দেই । আমি কোন যৌতুক নিইনি। আমি এ্যাম্বুলেন্স চালক ।আমার এ্যাম্বুলেন্স চালানোর উদ্দেশ্য হলো ,যখন আমার বড় মেয়ে জন্ম নেই ,তখন অক্সিজেনের অভাবে সে প্রতিবন্ধী জীবন বরন করে ।তারপর থেকে আমি এ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করি ।