রাজনীতি ডেস্ক:
কক্সবাজারের রামু সদরের বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়ে ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নাশকতার’ চেষ্টা চালানো হয়েছে। এই নাশকতার সৃষ্টির অন্তত ২০ মিনিটে আগে রামু ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফোন করে দুর্গম এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের মিথ্যা তথ্য দেয়া হয় ফোনে। যে ব্যক্তি ফোনে এই বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়েছিলেন তিনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কতটুকু দূরে ছিল তাও ‘চেক’ করেছেন। এরপরই কেরোসিন ব্যবহার করে বিহারটিতে আগুন দিয়েছে এক যুবক। বিহারের সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়া এই যুবক এবং ফোনে ফায়ার সার্ভিসকে বিভ্রান্তকারী ব্যক্তিকে খুঁজছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পুরো ঘটনাটি ‘পূর্ব পরিকল্পিত এবং নাশকতার চেষ্টা’। সিসিটিভির ফুটেজের যুবক বা ফোনে বিভ্রান্তকারি ব্যক্তিকে ধরা সম্ভব হলে সব কিছুই পরিষ্কার হবে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে রামু উপজেলা সদরের চেরাংঘাটাস্থ রাখাইন সম্প্রদায়ের দেড়শ বছরের পুরানো কাঠের তৈরি ‘উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারে (বড় ক্যাং) এই নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। এতে আগুনে বিহারটির কাঠের সিঁড়ির অংশ পুড়ে গেলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়নি।
ঘটনার পর থেকে শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলাব্যাপী নানা আলোচনা শুরু হয়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩০টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার ঘটনায় পুলিশের করা ১৮টি মামলার ৯ বছরে বিচার হয়নি। ফলে শনিবার সকাল থেকে বিহারের আগুনের ঘটনা নানাভাবে বিশ্লেষণ করে প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিহারের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ ও র্যাব।
র্যাব ১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক জানিয়েছেন, বিহারের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। যেখানে মুখে মাক্স পরিহিত এক যুবক বিহারের দেয়াল টপকিয়ে প্রবেশ করে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আগুন দেয়ার আগে ব্যবহার করা হয়েছে কেরোসিন। বিহারের অবস্থানরত ভান্তে এবং অন্যান্যরা জানিয়েছে প্রবেশের প্রধান দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সব কিছু বিবেচনায় এটা পূর্ব পরিকল্পিত নাশকতা বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। আর নাশকতার আগেই ফায়ার সার্ভিসকেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের রামু স্টেশনের ইনচার্জ সুমেন বড়ুযা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে একটি এয়ারটেল নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় ঈদগড় বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হন তারা। গাড়িটি জোয়ারিয়ানালা অতিক্রম করার পর একই ফোন নম্বর থেকে আবারও ফোন আসে। জানতে চাওয়া হয় কতদূরে রয়েছেন এবং তাড়াতাড়ি আসতে বলা হয়। অবস্থান ফোনের ব্যক্তিকে জানিয়ে দ্রুত যাওয়ার হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু ঈদগড় বাজারে পৌঁছার পর কোথাও আগুন দেখা যায়নি। এসময় নম্বরটিতে ফোন করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রামুর দিকে আসার পর বিহারের পক্ষে ফোনে আগুনের বিষয়টি জানানো হয়। বিহারের গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
বিহারটির ভিক্ষু জ্ঞানালংকার মহাথের জানান, রাতে সকলেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ধোঁয়া ও পোড়া গন্ধে সবার ঘুম ভেঙে যায়। সকলকে ঘুম থেকে তুলে বের হওয়ার চেষ্টা করলে প্রধান দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। পেছনের দরজা থেকে বের হয়ে আগুন দেখে চিৎকার দিলে এলাকার লোকজন এসে আগুন নেভানো শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে।
রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান বলেন, শুক্রবার রাতে রামু উপজেলা সদরের চেরাংঘাটাস্থ রাখাইন সম্প্রদায়ের দেড়শ বছরের পুরানো কাঠের তৈরী ‘উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারের (বড় ক্যাং)’ পুরোহিতসহ অন্যরা প্রতিদিনের মত ঘুমিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে রাত ২ টার দিকে আকস্মিক আগুন লেগে যায়। এসময় বৌদ্ধ বিহারের ভিতরে অবস্থানকারীরা শোর-চিৎকার শুরু করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। পরে খবর পেয়ে রামু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বৌদ্ধ বিহারটির ভিতরের কাঠের তৈরি একটি সিঁড়ি পুড়ে গেছে। তবে তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যুবক এবং ফোনে ফায়ার সার্ভিসকে মিথ্যা তথ্য দেয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করলে সব পরিষ্কার হবে।