রাজনীতি ডেস্ক:
নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির ডাকা ১১ দফা অবরোধের শেষ দিন ভোর রাতে গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় লাইন উপড়ে ফেলে বিএনপি কর্মীরা। এতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ বেশকটি বগি ছিটকে পড়ে পাশের ধানক্ষেতে। ঘুমের মাঝেই চিরঘুমে চলে যান একজন। আহত হন অনেকে। এরপরই তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ট্রেনে হামলাকারীরা মানবতার শত্রু। তারা জড়িত নন এ কাজে।’
গণমাধ্যমে পাঠানো রিজভীর আগ বাড়িয়ে করা এই মন্তব্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বাসে যারা হামলা করে, আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা করে- তারা কী মানবতার মিত্র?
যদিও গত দেড় মাসে রিজভী তার কোন ব্রিফিংয়ে বাসে হামলাকারী বা অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। দাবি করেননি বিচার বিভাগীয় তদন্তের। যেখানে ট্রেন দুর্ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা।
‘Bangladesh Nationalist Party-BNP’ পেজে অবরোধের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ, মশাল মিছিলের যেসব ভিডিও প্রকাশ করা হয়, সেসব ছবি আর গণমাধ্যমে সরবরাহ করা পিকেটিং বা ভাংচুরের ছবির উৎসও একই। অজানা উৎস থেকে পাওয়া ছবিকে বিএনপি-জামায়াতের পিকেটিংয়ের ছবি হিসেবে গণমাধ্যমগুলো গত দেড়মাস ধরে প্রচার করে আসছে। বিএনপি এ নিয়ে কোন আপত্তি করেনি, বাসে হামলা ও হেলপার পুড়ে মারা যাওয়ার পরও বিএনপি এ নিয়ে কোন বিবৃতি দেয়নি। প্রকাশ করেনি দুঃখ, জানায়নি শোক। উল্টো দিনের পর দিন গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে তারা।
২৯ অক্টোবর, রোববার বিএনপির ডাকা হরতালের প্রথম দিন ভোরে ডেমরায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন দেয়া হয়। এতে ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় নাঈম (২২) নামে অছিম পরিবহনের বাসের হেলপার মারা যান। এ ঘটনায় অপর হেলপাল রবিউল (২৫) দগ্ধ হন। এরপর ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়ে দলটি। কিন্তু থেমে থাকেনি তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও যানবাহন ভাংচুর।
এমনকি রিজভীর নেতৃত্বাধীন মিছিল থেকেও বাসে ঢিল মারার ঘটনা ঘটেছে। ৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে বের হওয়া মিছিলে নেতাকর্মীরা পকেটে ইট-পাথর নিয়ে অংশ নেন। মিছিল চলাকালে একপর্যায়ে তারা পকেট থেকে ইট-পাথর বের করে বাসে ছুড়তে থাকেন। যেখানে নির্বিকার দেখা যায় রিজভীকে।
শুধু তাই নয়, হরতাল-অবরোধে বাসে আগুনের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে আসছে ছাত্রদলের নাম। কখনও সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সরাসরি আবার কখনও অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে আগুন দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২৪১টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। একই সময়ে ৩৭৮টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে আরও জানা যায়, শুধু রাজধানীতে ১২৫টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু এর কোন ঘটনাতেই তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি রিজভীকে। আবার কোন ঘটনায় বিবৃতি দিলেও সেখানে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে সরকারি দলের সমর্থকদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বিএনপির এই অগ্নিসন্ত্রাস ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশবাসী দেখেছিল। নির্বাচন ঠেকানো ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ওইসময় আন্দোলনে ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে চালিয়েছিল জ্বালাও-পোড়াও, বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার মতো ভয়ংকর কর্মকাণ্ড।
নৃশংস ওই ঘটনাগুলোতেও বিএনপিকে তথা রিজভীকে কখনও অনুতপ্ত হয়ে বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি।