জসিম উদ্দিন, বাগেরহাট:
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একই কর্মস্থলে ৮ বছর কর্মরত আছেন মোংলা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পুষ্পজিৎ মন্ডল। এই সময়ে ক্ষমতার দাপটে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন, নানা দূর্ণীতি ও অনিয়মে। ওই সহকারী শিক্ষা অফিসারকে অন্যত্র বদলি করতে লিখিত সুপারিশ করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এরই মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর মোংলা থেকে তাকে বদলি করা হয় বরিশালের মেহেদিগঞ্জ উপজেলায়। অদৃশ্য কারনে আবার ১৯ অক্টোবর সেই বদলির আদেশ বাতিল করে শিক্ষা অধিদপ্তর। এনিয়ে চরম ক্ষুব্দ স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় মাঠ পর্যায়ে শিক্ষাখাতে দূর্ণীতির মহাৎসব চলছে। এতে ধবংস হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
জানা যায়,সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে ৩ জুলাই ২০১৬ সালে মোংলা উপজেলায় যোগদান করেন পুস্পজিৎ মন্ডল। নিজেকে পাশবর্তী উপজেলা রামপালের ভোটার দেখিয়ে মোংলা উপজেলায় যোগদান করেন তিনি। মুলত মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ৫ নং ওয়ার্ডে তার নিজ্বস্ব বাড়ী রয়েছে। স্ত্রী-লাবনি মন্ডল কর্মরত আছেন একই উপজেলার বিদ্যারবাহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েসহকারী শিক্ষিকা হিসেবে। দির্ঘ ৮ বছরকাল সময় ধরে একই কর্মস্থলে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন,নানা দূর্ণীতি ও অনিয়মে। বিভিন্ন স্কুলে সরকারী বরাদ্ধ আত্মসাৎ ,স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধর ও উর্দ্ধোতন কর্মকর্তা এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে তিনি চায়িয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে বসে দেব কুমার নামক প্রধান শিক্ষককে মারধর , লাঞ্চিত করার ঘটনা ও শিক্ষা খাতের নানা অনিয়ম এবং দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকার কারনে ২৪ জানুয়ারী-২০১৯ তারিখে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত সুপারিশ পাঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুমন্ত কুমার পোদ্দার। উনিশঅ/মোং/বাগের/২০১৯/৩৩৮ এই স্বারকে লিখিত সুপারিশে উপজেলা শিক্ষা অফিসার উল্লেখ করেন,সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডল নিজ বসবাসরত উপজেলায় চাকুরী করায় ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম করে চলেছেন। আর অনিয়ম ডাকতে স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটান বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষা ব্যবস্থা দূর্ণীতি মুক্ত রাখতে দ্রুত পুষ্পজিৎ মন্ডলকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
এছাড়া অনিয়ম দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকায় পুস্পজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অফিসকে নির্দেশ দেন,তৎকালীন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার। কিন্তু অদৃশ্য কারনে কোন সুপারিশ বা নির্দেশনা আলোর মুখ দেখেনি। এর আগে পুস্পজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে আনিত দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডলকে বেতন স্কেল থেকে এক বছরের জন্য ২২ হাজার টাকা অর্থ দন্ড করেন।
এছাড়া করোনাকালীন সময়ে স্কুলে সরকারী বরাদ্ধ টাকা ভাগবাটোয়ারা করার পুপস্পজিৎ এর ভিডিও ভাইরাল হয় । এর পর একটি প্রথম সারির টেলিভিশনে ২৫ নভেম্বার ২০২০ একটি রির্পোট প্রচার হয়। এর পর আবারও ২০২১-২২ অর্থ বছরের মোংলা উপজেলার ৭১ টি স্কুলে সরকারী বরাদ্ধের এক কোটি ৩২ লক্ষ টাকা নয় ছয়ের সাথে জড়িত অভিযোগ উঠে পুস্পজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে। এনিয়ে দূণীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় দুই বাসিন্ধা । এরই মধ্যে এ বিষয়ে দুদফায় তদন্ত করেছে দূর্ণীতি দমন কমিশন( দুদক)।
দূর্ণীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দাখিলকারী মোঃ পলাশ ইজারাদার বলেন, দেশের আইনকানুন আর নিয়মনীতি আজ পুস্পজিৎদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নানা অনিয়মে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডলকে গত ২৭ অক্টোবর এক আদেশে মোংলা থেকে বরিশালের মেহেদিগঞ্জ বদলি করা হয়। মাত্র ২০/২১ দিনের মধ্যে ১৯ নভেম্বার সেই আদেশ বাতিল করে শিক্ষা অধিদপ্তর। তিনি অভিযোগ করেন, দূর্ণীতির প্রমান মেলার পরও এক ব্যাক্তিকে ৮ বছর একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগ দেওয়া মানে ওই ব্যাক্তির দূণীতির ভাগবাটোয়ারা শিক্ষা অধিদপ্তর পাচ্ছেন! তাই এসব দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। দূণীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগকারী আরেক ব্যাক্তি মোঃ সাহাব উদ্দিন শিকারী জানান, লিখিত অভিযোগ করেও দূর্নীতি বন্ধ করা স¤ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয থেকে শিশুদের শিক্ষা জিবন শুরু হয়। সেখানে শিক্ষক,শিক্ষা অফিসার দূর্ণীতিবাজ হলে শিশুরা কি শিখবে। মোংলা উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে দূর্ণীতি মুক্ত রাখতে সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়মেন সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডলের সহয়তায় মোংলা উপজেলার আন্ধারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক কতৃক ৮৫ লক্ষ টাকা নয়-ছয় করে সরকারী কোষাগার থেকে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বাসিন্ধা মোঃ শাজাহান সিদ্দিকি।
নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডলের বদলির আদেশ স্থগিত হওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১)মোঃ আবদুল আলীম মুঠোফোনে জানান, প্রশাসনিক কারনে পুস্পজিৎ মন্ডলকে বদলি করা হয়ে ছিলো। তবে কি কারনে আবার সে আদেশ বাতিল করা হয়েছে, ওই বিষয়ে মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলতে প্রতিবেদককে অনুরোদ করেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অফিসিয়াল টেলিফোন নাম্বারে ২ বার ফোন দেওয়া হলে মোঃ হুমায়ন আহম্মেদ ফোন রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় জেনে বলেন, মহাপরিচালক মহোদয় মিটিংয়ে আছেন।