আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকার একটি হাসপাতালে ইসরাইলের বিমান হামলার ঘটনার দায় থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, তার কাছে ‘এই হামলা অন্য কোনো পক্ষ চালিয়েছে’ বলে মনে হচ্ছে। গাজা হাসপাতাল হামলার একদিন পরই ইসরাইল সফরে গিয়ে এ কথা বলেন বাইডেন।
গত ১২ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এতে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি নিহত ও ১২ হাজারের বেশি আহত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) অবরুদ্ধ উপত্যকার একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে হামাস। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস।
হামলার নিন্দা জানিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া পোস্টে গুতেরেস লিখেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর) গাজার একটি হাসপাতালে হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি হতভম্ব। আমি এর তীব্র নিন্দা এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ এরই মধ্যে ইসরাইলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের একদিন পরই ইসরাইল সফর শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বুধবার (১৮ অক্টোবর) তেল আবিব পৌঁছান তিনি। পৌঁছার পরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি আজ এখানেই থাকতে চেয়েছিলাম। কারণটা খুবই সাধারণ। আমি চাই ইসরাইলের মানুষ ও বিশ্বের মানুষ জানুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায়।’
ইসরাইলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক অভিযানকে ‘নৃশংসতা’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা (হামাস) আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর মতো নৃশংসতা চালিয়েছে। তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে হামাস সব ফিলিস্তিনির প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তারা তাদের জন্য কেবল কষ্টই বয়ে নিয়ে এসেছে।’
এরপর গাজা হাসপাতাল হামলা নিয়ে কথা বলেন বাইডেন। এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই ইসরাইলি নেতা নেতানিয়াহুর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ইসরাইল নয়, ওই হামলা ‘অন্য কোনো পক্ষ চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে’।
তার বক্তব্য, ‘গতকাল গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণে আমি গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবে আমি যা দেখেছি তার ওপর ভিত্তি করে আমার মনে হয়েছে, এটি অন্য কোনো গোষ্ঠী বা পক্ষ করেছে।’
গাজার হাসপাতালে হামলার দায় অস্বীকার করেছে ইসরাইলও। নেতানিয়াহু প্রশাসন বলছে, ওই হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই। হামলার জন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
এই সফরে বাইডেনের জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হাসপাতালে ইসরাইলের বর্বরোচিত বোমা হামলার প্রতিবাদে বাইডেনের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছে জর্ডান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও।
এদিকে ওই হামলার ঘটনার পর ইসরাইলকে উদ্দেশ করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় বলেছেন, ‘টাইম ইজ ওভার (অর্থাৎ সময় শেষ)।’ এর মাধ্যমে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।