হোম খুলনাযশোর মনিরামপুরে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নিন্ম আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :

যশোরের মনিরামপুরে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাট-বাজার গুলোতে কাঁচা তরিতরকারি ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নিন্ম আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ পেতে বাজার মনিটরিং দরকার রলে ক্রেতা সাধারণরা দাবী করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্যের কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতা-সাধারণ বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বাজার দাম নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা। বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন মনিরামপুর ও নেহালপুর কাঁচা বাজারে যেয়ে দেখা যায়, তরিতরকারির মূল্য সীমাহীনভাবে বেড়ে গেছে।

জানা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, কাঁচকলার কেজি ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, খিরাই ১২০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, ধনে পাতা ১৫০ টাকা, কাগজী লেবু প্রতি পিচ ১০টাকা, গোলআলু ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, কাঁচা ঝাল ২০০ টাকা, ডাটা ৪০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লালশাক ৬০ টাকা, ওল ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে সবজির যথেষ্ট আমদানী থাকলেও দাম বাড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনিরামপুর পৌর শহরের কাঁচা বাজারের খুচরা দোকানী সেলিম হোসেন জানান, পাইকারদের কাছ থেকে এখন চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই যেমন দরে কিনছি তেমন দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ আলমগীর নামে এক কৃষক বলছে, আমাদের কাছ থেকে যে দামে সবজি কিনছে, তাই চেয়ে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছে খুচরা ব্যাবসায়ীরা। যার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে কাঁচা তরিতরকারির পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। নেহালপুর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী গাজী আব্দুল ওহাব জানান, তেল, মসলা, ডাল, আটা, চিনিসহ সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে প্রতিটি পণ্য কিনতে হচ্ছে। যেমন দামে আমরা কিনছি সেই অনুযায়ী বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নাসিম জানান, পণ্য সামগ্রীর দাম আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেশ বেড়ে গেছে। যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে তাতে খরিদদারের কাছে বিশ্বস্থ্যতা বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, আটা, চিনি, বিস্কুট, ডিম, মসলাসহ সকল পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি জানান, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে মাসে ৭ হাজার টাকার বেতনে অস্থায়ী চাকরি করেন। এই অল্প আয়ে বর্তমান উর্ধ্বগতির বাজার করে সংসার চালাতে যেয়ে তাকে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে। সংসারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন না। এই রকম বহু অল্প আয়ের মানুষ রয়েছে যারা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাছ ও মাংসের দামও বেড়ে গেছে বাজার করতে আসা নেহালপুর গ্রামের কায়ছেদ মোল্যা (৪৫), কামরুজ্জামান (৫৫), বাবুল আক্তার (৫০), দত্তকোনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৬৫), কোনাকোলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৪৫) সহ কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ জানান, বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে তাতে চাহিদা মাফিক জিনিসপত্র কিনতে পারছি না। দাম অনেক বেশি। কি করে সংসার চালাবো, এই ভেবেই তারা সবাই এখন হতাশাগ্রস্থ।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মনিরামপুরসহ উপজেলার নেহালপুর, মনোহরপুর, কপালিয়া, মশিয়াহাটী, চিনাটোলা, রাজগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, খেদাপাড়াসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্যসমাগ্রীর বিক্রয় মূল্য তালিকা নেই। ইচ্ছা খুশি মোতাবেক ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম হাকিয়ে বিক্রয় করছে। এ বিষয়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ক্রেতা সাধারণ মানুষ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন