হোম এক্সক্লুসিভ মনিরামপুরে দারোগার বাড়িতে দূধর্ষ ডাকাতি, একমাস পার হলেও মামলা নেয়নি থানার ওসি

নিজস্ব প্রতিনিধি :

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ২ টা ছুঁই ছুঁই। পুলিশ সুপারের অনুমতি নিয়েই তার অফিস কক্ষে ঢুকে স্যালুট ঠুকলেন সাদা পোশাকের এক নারী। নাম তার গঙ্গা রানী চক্রবর্তী। তিনি বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক। বর্তমান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের অধিনস্থ বিশেষ শাখায় কর্মরত। উপ-পরিদর্শক গঙ্গা রানী তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না। সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল তার ৭৫ বছর বয়সের শ্বাশুড়িকে পিটিয়ে মারাত্মক যখম করেছে। নিয়ে গেছে নগদ টাকা,স্বর্ণালংকারসহ সর্বস্বই। কিন্তু দূর্ভাগ্য এঘটনায় যশোর জেলার মনিরামপুর থানায় এজহার দাখিল করলেও থানার ওসি মামলা নথি ভুক্ত করেননি। নিরুপায় হয়ে গঙ্গা রানী তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার শরনাপন্ন হলেন। কয়েক মিনিট পুলিশ সুপারের সামনে দাঁড়িয়ে উপ-পরিদর্শক গঙ্গার চোখের ফোঁটা ফোঁটা নোনা পানি ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছিলো । কিছু সময়ের জন্য পুলিশ সুপারও কিছুটা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি মনিরামপুর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বললেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, একজন দারোগার বাড়িতে ডাকাতি হলো গত ৭ সেপ্টেস্বর । এক মাস ৫ দিন পেরিয়ে গেল। কিন্তু মামলাটি আজও নথিভুক্ত হয়নি। একজন পুলিশ কর্মকতা যদি আইনের প্রতিকার না পাই, তাহলে সাধারন মানুষ যাবে কোথায়? সাতক্ষীরা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে এখবর পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল মনিরামপুর উপজেলার আম্রুঝুটা গ্রামের পুলিশের উপ-পরিদর্শক গঙ্গা রানী চক্রবর্তীর বাড়ির জানালার গ্রীল ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। এসময় ওই পুলিশ কর্মকর্তার শ্বাশুড়ি বয়োঃবৃদ্ধা গীতা রানী চক্রবর্তী ডাক-চিৎকার দিলে সশস্ত্র ডাকাত দল তাকে পিটিয়ে রক্তাত্ত জখম করে।

এলাকাবাসীর সন্দেহ, ডাকাত দলের একটি গ্রুপ ঘরে ঢুকে নগদ অর্থ, ১০-১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুটপাট করে। আরেকটি গ্রুপ বাড়ির চারিপাশে অবস্থান নেয়।

বয়োঃবৃদ্ধা গীতা রানী চক্রবর্তীর ছেলের নাম বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। তিনিও সাতক্ষীরা কোর্ট পুলিশে কর্মরত এবং পুত্রবধু সাতক্ষীরা জেলায় পুলিশের বিশেষ শাখায় উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত।

আহত বৃদ্ধার প্রতিবেশী সুদ্বীপ কুমার বলেন, বৃদ্ধা একা বাড়িতে থাকেন। ঘটনার পরদিন সকালে বৃদ্ধার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর পুলিশ সদস্য ছেলে তাকে ফোন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহ এলাকাবাসী গিয়ে বৃদ্ধাকে ডাকাডাকি করেন। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে একপর্যায়ে দেখা যায় ঘরের জানালা ভাঙা, ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করা। বৃদ্ধা রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত বৃদ্ধার ছেলে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী জানান, তারা দুই ভাই চাকরীরর কারনে বাইরে থাকেন। বাবা মারা যাওয়ায় মা গ্রামের বাড়িতে একা থাকেন। ঘটনার দিন দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে ঘটনার পরেরদিন ভোর পর্যন্ত কোন এক সময় ঘরের দক্ষিণ পাশের গ্রিল কেটে দুজন লোক ঘরে ঢোকে। বাকিরা বাইরে ছিল। এসময় মা চিৎকার দিতে গেলে ওরা মাকে গলাটিপে ধরে মারপিট করে। তখন মার নাক মুখ দিয়ে রক্ত ওঠে। ওরা ১০-১২ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ১৫ হাজার টাকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।

এঘটনায় অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে মনিরামপুর থানায় এজহার দাখিল করা হলেও একমাস ৫ দিনের মধ্যেও অদৃশ্য কারনে মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়নি। ধারনা করা হয়, দন্ডবিধির ৩৯৪/৩৯৫ ধারায় মামলাটি নথিভূক্ত করতে থানার ওসি অনীহা প্রকাশ করেন। যার কারনে আজও দারোগা বাড়ির ডাকাতির ঘটনা মনিরামপুর থানায় এজহার হিসেবে গণ্য হয়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন