রাজনীতি ডেস্ক:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এদেশে সরকার বদল করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে সরকার বদল করার কোনো উপায় নেই। আর বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে বলেও আমরা এটি মনে করি। বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের কথাগুলো তুলে ধরেন।
আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় যদি কোনো প্রার্থী অনিরাপত্তাবোধ করেন কিংবা কোনো দল বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ করেন তখন কী হবে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে এমন প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়েছেন ঢাকায় সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে তা নির্বাচনের আগের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে আসা মার্কিন প্রতিনিধিরা কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন, তাদের বলা হয়েছে। এবার তাদের প্রতিনিধি দলের নেতা ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এসেছিলেন। নির্বাচনের সময় কোনো সহিংসতা হতে পারে বলে শঙ্কা করছি কিনা; তা জানতে চেয়েছেন তারা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্ন তারা জিজ্ঞাসা করেছেন। আমরা বলেছি, এ জাতি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড দেখেছে, এমন হত্যাকাণ্ড আর দেখেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশে আসতে দেয়া হয়নি। তিনি আবার এখানে আসার পর তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি তাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই। আমাদের দেশের মানুষ কোনো ধরনের সংঘর্ষ চায় না।
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি সহিংসতামুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়েছি। এখানে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিও চান, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তিনিই প্রবর্তন করেছেন। কাজেই এখন দুর্নীতির কোনো কারণ নেই। এসব কথা জানানো হয়েছে তাদের।
সহিংসতা ছাড়া আর কোন বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন এবং সহিংসতার বিষয়টি এখানে এসেছে কেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তারা বলেছেন-যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন; তাদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারব কিনা? তারা জিজ্ঞাসা করেছেন, বিরোধীদল নির্বাচনে এলে সঠিকভাবে তারা প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা। আমরা বলে দিয়েছি, নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা সর্বময় ক্ষমতাধর ব্যক্তি; তার নেতৃত্বে সেই এলাকার নির্বাচন হবে এবং হয়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এমন কী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতারও কথাও বলা হয়েছে তাদের।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচনে হবে-এমন প্রত্যাশাই তারা করেছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কোনো প্রার্থী যদি অনিরাপত্তাবোধ করেন-তাহলে আমরা কী করব তা জানতে চেয়েছেন তারা। কোনো দল যদি মনে করে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তখন কী হবে? এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন পর্যবেক্ষকরা, মন্ত্রী জানান।
এরপর আবার মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন পরিচালনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যে বাহিনীগুলো রয়েছে, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে থাকে, তারা এরইমধ্যে অনেকগুলো নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। এ নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে পাঁচ হাজার ৩০০টি নির্বাচন পরিচালনা করেছে। নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে। এখানে পুলিশ সুপ্রশিক্ষিত, কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়, তা তারা জানে। আগের মতো সহিংসতা আমাদের দেশে হয় না। এখন আমরা সহিংসতামুক্ত। কাজেই এখানে কোনো অসুবিধা হবে বলে তা আমরা মনে করি না। আগে ৮০ ও ৯০ এর দশকে সহিংসতা হলেও এখন দেশে এমন কিছু ঘটে না বলে আমরা জানিয়েছি। আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের উপমহাদেশে নির্বাচন আসলেই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পর্যবেক্ষকদের বলা হয়েছে, আমাদের গণমাধ্যম একদম স্বাধীন। তারা যেকোনো সংবাদ যেকোনো সময় ছাপিয়ে দেয়। সেই ব্যাপারে আমরা কারও কণ্ঠরোধ করি না। আমাদের তিন হাজারেরও বেশি দৈনিক সংবাদপত্র রয়েছে। এরপর রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে তো নানা ধরনের সংবাদ দিয়ে থাকে; সেটা আপনারা জানেন। কাজেই এখানে দুর্নীতি করে কিংবা ভোট কারচুপি করে কেউ পার পাবে বলে আমার মনে হয় না, আমার বিশ্বাসও হয় না। আর সেই ধরনের মনোবৃত্তি আমাদের রাজনৈতিক দলের এখন আর নেই। কারণ এরা সবাই মনে করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেবে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে সহিংসতা হবে কিনা এ প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘আমি তো মনে করি তারা নির্বাচনে আসবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে সরকার বদল করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। এটি ছাড়া বাংলাদেশে সরকার বদল করার কোনো উপায় নেই। নির্বাচনে তাদের আসতেই হবে, আমরা এটি মনে করি।’
সচিবালয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবেশ করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা৷ এর আগে, গত শনিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের ৬ সদস্য। ৮ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আইআরআই (ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট) ও এনআডিআই (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট) হলো নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা। যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করতে কাজ করে। সংস্থা দুটি সম্মিলিতভাবে গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।