হোম অন্যান্যসারাদেশ রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে নিয়ম বর্হিভূতভাবে তিন কর্মচারী নিয়োগ, ৩৫ লাখ টাকার অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ

যশোর অফিস:

যশোরের মণিরামপুরের রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে তিন কর্মচারী নিয়োগে ৩৫ লাখ টাকার অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে নিয়ম বর্হিভূতভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলনো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ঘটনা চাওর হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, মণিরামপুরের রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজটি এলাকার সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। যে কারণে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্নু হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১০ জুলাই স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ও একজন আয়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে ওই পদে কর্মরতদের শুন্য দেখাতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ তা না করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

সূত্র জানায়, অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান অবসরে গেছেন। আর আয়া জাবেদা খাতুন মারা গেছেন। তাদের নামও এখনো পর্যন্ত এমপিও তালিকায় রয়েছে। অথচ নিয়ম রয়েছে, নাম কেটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার। কিন্তু অধ্যক্ষ এসব নিময়কে তোয়াক্কা না করেই অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

সূত্র জানায়, পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে আবু সাঈদ নামে একজন আবেদন করেছেন। তার জন্ম হয়েছে, তিন বার। তিন জায়গায় তিন রকম জন্ম তারিখের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই আবু সাঈদের আইডি কার্ড অনুয়ায়ী তার জন্ম তারিখ ১২/০৯/১৯৮৫ ইং। ২০২১ সালের ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১২/০৯/১৯৭৫ ইং। কলেজে নিয়োগ পেতে আবু সাঈদ তার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করেছেন। সর্বশেষ ভোটার কার্ডে তার জন্ম তারিখ ০৯/১২/১৯৮৮ ইং। এখন প্রশ্ন হলো আবু সাঈদের সত্যি জন্ম তারিখ কোনটা। এলাকার মানুষের দাবি, একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার জন্ম তারিখ নির্ধারণ করা হোক।

এদিকে, মজার বিষয় হচ্ছে আবু সাঈদের স্ত্রী মোছা: সালমা খাতুন (শিল্পী)’র ২০১৬ সালের ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ০৪/০৭/১৯৮২। ২০২১ সালের ভোটার আইডি কার্ডে একই জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে। আবু সাঈদ থেকে তার স্ত্রী সালমা খাতুন শিল্পীর বয়স বেশি হওয়ায় বিষয়টি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আবু সাঈদের এই জাল জালিয়াতির সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ নিজেই বলে অভিযোগ।

সূত্র জানায়, তিন পদে নিয়োগ বাণিজ্যের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ। তিনজনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন কর্মচারী রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে কর্মরত আছেন। তাদের নিয়োগে ব্যবস্থা না করেই বাণিজ্যের স্বার্থে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অধ্যক্ষ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে কে বললো ?

তিনি জানান, আমরা যেদিন এমপিও তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে পারবো, সেদিন নিয়োগ দেব।

আবু সাঈদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবু সাঈদ যদি খাটে তাহলে নিয়োগ দেব। না হলে দেব না।

যোগাযোগ করা হলে কলেজের সভাপতি মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, এমপিও তালিকা থেকে নাম কাটার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আর আবু সাঈদের বিষয়ে অভিযোগ আমার কাছে আছে। এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আমরা যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন