হোম জাতীয় বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া: রাষ্ট্রদূত

জাতীয় ডেস্ক:

তৈরি পোশাক খাতের মতো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও দক্ষিণ কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘কোরিয়া বাংলাদেশ ইকোনমিক কো-অপারেশন: শেয়ারিং ডেভেলপমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড এক্সপ্লোরিং অপরচুনিটিজ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ‘বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সাহায্যে কোরিয়া তার অর্থনীতিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এই উন্নয়ন অভিজ্ঞতা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহী।’

বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,
আমরা এরই মধ্যে গত এক দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের তিন গুণ বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি। তৈরি পোশাক খাতের মতো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও দক্ষিণ কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায়।

সেমিনারে সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক হিওক জিয়ং বলেন, ‘১৯৬০-এর দশকেও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি উন্নত ছিল না। অতিরিক্ত সামরিক ব্যয়ের পাশাপাশি ছিল প্রযুক্তির অভাব ও জমির স্বল্পতাসহ জনসংখ্যার চাপ। তবে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ার। একইভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের অবস্থাও ছিল অনেকটা একই রকম। দেশটিও তেমন কোনো সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নতি করেছে।

একই কথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিতে হবে বাংলাদেশকে।’

সেমিনারে ‘কোর ইন্ডাস্ট্রিজ ফর কোরিয়ান ডেভেলপমেন্ট: ইমপ্লিকেশনস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক বক্তব্যে কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডের (কিয়েট) নির্বাহী পরিচালক ড. ডং সু কিম বলেন, ‘সত্তরের দশকে কোরিয়া হালকা প্রকৌশল, পেট্রোকেমিক্যাল, স্টিল, অটোমোবাইল ও ইলেকট্রনিকসের পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছিল।’

দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরীয় পিতামাতারা শিশুর যথাযথ শিক্ষার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ও সচেতন। সেখানে হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যাওয়ার হারও অত্যন্ত বেশি। বাংলাদেশকেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ ক্ষেত্র উল্লেখ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগই হচ্ছে পুনর্বিনিয়োগ। বিনিয়োগ আকর্ষণে বিডা ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিচ্ছে।’

বাংলাদেশে এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চান হং বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন,
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো ও পরিবহন খাতে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবসম্পদ ও উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি। এ ছাড়া টেকসই পরিবহন খাতের পাশাপাশি, পরিবেশবান্ধব বাসস্থান এবং গ্রিন ইকোনমি গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে একটি দেশ কীভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে, দক্ষিণ কোরিয়ার থেকে সে উদাহরণ গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’

কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (কেবিসিসিআই) পরিচালক এডওয়ার্ড কিম কোরীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওয়ার্ক পারমিট, বাংলাদেশে বিনিয়োগের লভ্যাংশ বাংলাদেশের বাইরে নেয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ, কাস্টমসের ক্লিয়ারিংয়ে বিলম্বসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশে কোরীয় বিনিয়োগকারীরা।’

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিয়া শাহনাজ, আইসিটি ডিভিশনের পলিসি অ্যাডভাইজর মো. আব্দুল বারী, কেবিসিসিআই সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন