হোম আন্তর্জাতিক যে কারণে চীনে নিজ নাগরিকদের উচ্চস্বরে কথা না বলার পরামর্শ জাপানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চীনে বসবাসরত নিজ নাগরিকদের জনপরিসরে উচ্চস্বরে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছে জাপান। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দেশটির দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ পরামর্শ দেয়া হয়। মূলত ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলার ঘটনায় বেইজিংয়ের কঠোর প্রতিক্রিয়ার পর নাগরিকদের সতর্ক করে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

এখন থেকে প্রায এক যুগ আগে ২০১১ সালে জাপানের পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। যাতে তছনছ হয়ে যায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৯ মাত্রার ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়। তাতে কার্যত ভেসে যায় হংসু দ্বীপ। মারা যায় প্রায় আঠার হাজার মানুষ।

বড় ধরণের ঢেউ আঘাত হানে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং এর পারমানবিক চুল্লি প্লাবিত হয়। যা বড় ধরণের বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটায়। কর্তৃপক্ষ একটি এক্সক্লুসিভ জোন তৈরি করে যা দিন দিন বড় হতে থাকে। কারণ ওই কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছিল।

বিকিরণ বন্ধ করতে কেন্দ্রে সিল করা যে ধাতব টিউবে জ্বালানি ইউরেনিয়াম থাকে, সেই টিউব বা রডগুলোকে ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহার করা হয় পানি। যার পরিমাণ প্রায় ৫০০টি অলিম্পিক সাঁতার পুলের পানির সমান।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের কারণে এই পানিও তেজস্ক্রিয় হয়ে যায়। পরিবেশের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সেই পানি প্রায় ১ হাজারটি বিশেষ ধাতব কন্টেইনারে ধরে রাখা হয়। সেই দূষিত পানিই পরে সাগরে ফেলার পরিকল্পনা করে জাপান।

সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি সেই পানি পরিশোধিত বা যথাসম্ভব তেজস্ক্রিয়তামুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করে তা সাগরে ফেলার জন্য জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা আইএইএ-র কাছে অনুমোদন চায় দেশটির সরকার এবং চলতি বছরের জুলাই মাসে আইএইএ’র অনুমতি পায়।

যদিও শুরু থেকেই জাপান সরকারের এই পরিকল্পনায় নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে চীন। বিশেষ সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার সিদ্ধান্তকে ‘স্বার্থপর এবং পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ অভিহিত করে বিতর্কিত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় বেইজিং। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও তেজস্ক্রিয় পানিকে নিরাপদ বলে সনদ দেয় জাতিসংঘ পরমাণু নজরদারি সংস্থা।

চীনের আপত্তি ও পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সুনামি বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে নিষ্কাশন শুরু করে জাপান।

এরপরই চীন, হংকং ও ম্যাকাও বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী টোকিও ও ফুকুশিমাসহ অঞ্চলগুলো থেকে আসা জাপানি সামুদ্রিক খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াও বলেছে, জনসাধারণের উদ্বেগ লাঘব না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার মৎস্য ও খাদ্য পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

এছাড়া এদিন চীন আবারও জাপানের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাপান সরকার পানি নিষ্কাশনের বৈধতা প্রমাণ করেনি। দেশটির কর্তৃপক্ষের স্থানীয় জনগণের এমনকি বিশ্বের জনগণকে তার নিজস্ব স্বার্থের জন্য ক্ষতি করা উচিত নয়।’

চীনের পক্ষ থেকে এমন সমালোচনার পরই দেশটিতে বসবাসরত জাপানি নাগরিকদের সতর্ক করা হয়। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) চীনে অবস্থিত জাপানি দূতাবাসে ওয়েবসাইটে একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়।

তাতে জাপানি নাগরিকদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়, ‘বাইরে গেলে সতর্ক থাকার চেষ্টা করুন। যেমন বিনা প্রয়োজনে জাপানি ভাষায় উচ্চস্বরে কথা না বলা।’ এছাড়া নোটিশে দূতাবাসের পরিস্থিতির দিকে ‘গভীর মনোযোগ রাখার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

চীন শাসিত হংকংয়েও জাপানি নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। হংকংয়ে জাপানি দূতাবাস এক নোটিশে নাগরিকদের ফুকুশিমার পানি ফেলা সম্পর্কিত কোনো বিক্ষোভে অংশ না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাপানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি হংকংয়ের জাপানি দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ করেছে পরিবেশবাদীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন