জাতীয় ডেস্ক:
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য ৬০ বছর বয়সি খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করা সেই ছাত্রীকে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি ওই ছাত্রীর সঠিক বয়স কত তা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শুনানিতে আদালত বলেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাই ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিম মানে ওই ছাত্রী নারী ও সমাজ সেবা অধিদফতরের অধীনে সেইফ হোমে (নিরাপদ হেফাজতে) থাকবে।
এর আগে বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দীলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে সেই ছাত্রীর বাবার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের জামিন শুনানি হয়। ওই শুনানিতে আদালত অপারগতা প্রকাশ করে জামিন আবেদনটি ফিরিয়ে দেন।
আদালত বলেন, গভর্নিং বডির সদস্য হয়ে ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করে নৈতিকভাবে কাজটি ঠিক করেননি খন্দকার মুশতাক আহমেদ।
কলেজছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে ও ধর্ষণের অভিযোগে মুশতাককে প্রধান আসামি করে ১ আগস্ট মামলাটি করা হয়। ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভুঁইয়া। এর আগে সকালে খন্দকার মুশতাক আহমেদের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট এ মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, ‘এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি খাতে নেয়া উচিত।’
আদালত আরও বলেন, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য একজন ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন- এটা তো বিকৃত রুচির লক্ষণ। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন।
গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। যিনি ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদকে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে আসামি করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আগামী ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতের নির্দেশে গত ৮ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি নথিভুক্ত (রেকর্ড) হয়। মামলার বাদীর আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে হয়রানির অভিযোগে গত ৩১ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি (গভর্নিং বডি)। পরে গত ২২ জুন ওই শিক্ষার্থীর বাবা ঠাকুরগাঁওয়ে মুশতাকের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন। গত ৪ জুলাই বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। সেদিন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহরাব হোসেন পলাশ বলেন, আইডিয়ালের ওই শিক্ষার্থীকে গত মার্চ মাসে খন্দকার মুশতাক বিয়ে করেছেন।