হোম অর্থ ও বাণিজ্য ডিম সিন্ডিকেট: এসএমএসেই পকেটে কোটি কোটি টাকা!

বাণিজ্য ডেস্ক:

রাজশাহীতে প্রান্তিক খামারি কমে যাওয়ায় স্থানীয় ফার্মের ডিমে বাজারের মূল নিয়ন্ত্রক গুটি কয়েক ব্যবসায়ী। তারা আবার দাদন ব্যবসায়ে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে এসব ব্যবসায়ী সমিতি করে রাজশাহীতে বসেই নির্ধারণ করেন সারা দেশের ডিমের দাম। এসএমএসের মাধ্যমেই জানিয়ে দেয়া হয় কত টাকা দরে ডিম বিক্রি করতে হবে।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজশাহী সাহেব বাজারে প্রতি হালি লেয়ার মুরগির ডিমের দাম ৪৬ থেকে ৫০ টাকা। পাড়া মহল্লায় দাম আরও বাড়তি। অথচ এদিন পবার মোসলেমের মোড়ে খামার পর্যায়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয় ৪১ টাকা ৬০ পয়সা। খামারিরা জানান, চলতি মাসে গড়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি করে ৩৮ টাকা দাম পেয়েছেন তারা।

পবার রনহাট গ্রামের হাবিব জানান, মুরগির খাবার ও ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে প্রান্তিক অনেক খামারি ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা ছোট খামারি ডিম উৎপাদনের ব্যবসায় লেগে আছেন তারা অধিকাংশই দাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। ডিমের পাইকার হাফিজসহ কয়েকজনের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ব্যবসা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছেন। ফলে ছোট ছোট যেসব খামার থেকে ডিম উৎপাদন হয়, তার মালিকরা দাদন নেয়ার কারণে হাফিজদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য। এতে দাদনকারীর বেঁধে দেয়া দামে ডিম বিক্রি করতে হয়।

একাধিক প্রান্তিক খামারি জানান, বাজারের তুলনায় প্রতি পিস ডিমে তারা ২ টাকা কম পান। কারণ ডিম বিক্রি পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত। রাজশাহী পোল্ট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন সমিতির মাধ্যমে ডিমের দাম কত হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের নির্ধারিত দামের বাইরে ডিম বিক্রির সুযোগ নেই এ অঞ্চলে। শুধু রাজশাহী নয়, সারা দেশে ডিমের দর কত হবে তা নির্ধারিত হয় রাজশাহী, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে। প্রতিদিন সকালে ডিমের দর নির্ধারণ করে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তায় সবাইকে জানিয়ে দেন সংগঠনের সভাপতি।

খামারিরা জানান, রাজশাহীর ডিম ব্যবসা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করেন, মোসলেমের মোড়ে হাফিজ, জয়নাল, বেলাল, রাব্বানী এবং সাহেব বাজারে নিয়ন্ত্রণ করেন জাহিদ ও সেলিম।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ সিন্ডিকেটে ডিমের ব্যবসার বিপরীতে প্রতি মাসে ২ কোটি টাকা আয় করে।

মল্লিকপুরের রবিন শেখ নামে একজন জানান, নিউ বেলাল ফিশ ফিডের বেলাল হোসেনের অন্তত ৩০টি খামার রয়েছে। বেলালের মতো হাতে গোনা কয়েকজন এ এলাকার ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। যেহেতু প্রান্তিক খামারি কম, তাই ডিমের একচেটিয়া ব্যবসা করে বিত্তবান খামারিরা।

সংগঠনটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কথা বলে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়, যাতে বাজার পরিস্থিতি ঠিক থাকে। একই সঙ্গে খামারি ও ভোক্তা স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকে। আড়ত খরচ, পরিবহন ও বিপণন ব্যয়ের কারণে খামার ও খুচরা পর্যায়ে দামের এমন বলে দাবি তার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ডিম উৎপাদন হয়। গেল বছর ডিম উৎপাদন হয়েছে ৫০ কোটির বেশি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন