অনলাইন ডেস্ক:
কংক্রিটের ফ্লোর, কাঠের ফ্রেম ও টিনের চালার ঘর ভর্তি গরু। দরজার পাশেই ঘাসমুখে জাবর কাটছে বিশালাকৃতির তিন ষাঁড়। এরপরে রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ষাড় ও বিভিন্ন বয়সের গরু। গরুগুলোর মাথার ওপর ঝুলছে দ্রুত গতি ফ্যান। পায়ের নিচে রয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত ম্যাট্রেস। গরুর খাবার ও পয়নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আদর্শ একটি পশু ফার্ম এটি।
‘মহুমা-মানহা অ্যাগ্রো পার্ক’ নামে এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক কচুয়া উপজেলার কচুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার হাদিউজ্জামান।
উপজেলার টেংরাখালী গ্রামে নিজ বাড়িতে গড়া চেয়ারম্যানে এই খামারে এবার কোরবানিতে বিক্রি উপযোগী বিভিন্ন বয়স আকৃতির ১৩টি ষাঁড় রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বড় ষাঁড়টির নাম টাইগার। ৬ ফুট উচ্চতা ও ১১ ফুট লম্বা ষাড়টির ওজন ৭শ’ কেজির ওপরে। গারো খয়রি রঙের ওপরে সাদা ছোপ, মাথায় সাদা চিতার এ ষাড় ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের নজর কেড়েছে। বিশালাকৃতির এই ষাড়টির দাম হাকা হয়েছে ৬ লাখ টাকা।
শুধু টাইগার নয়, এই খামারে সাড়ে ৬শ’ কেজি ওজনের আরও দুটি গরু রয়েছে। যার একটির নাম বাংলালিংক অন্যটি দয়াল। কুচকুচে কালো রঙের ওপর হালকা লালচে ডোড়াকাটা হওয়ায় নাম রাখা হয়েছে বাংলালিংক। সুন্দর গড়নের এ ষাঁড়টির দাম হাকা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
বাংলালিংকের পাশেই থাকে ফ্রিজিয়ান জাতের দয়াল। সাড়ে ৬শ’ কেজি ওজনের দয়ালের দাম হাকা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিভিন্ন দাম ও আকৃতির আরও ১০টি ষাঁড় রয়েছে যা এই কোরবানিতে বিক্রি করা হবে।
কোরবানি উপলক্ষে এসব গরু প্রস্তুত করা হলেও, মোটাতাজা করা হয়েছে ঘরোয়া খাবারে। নিজের খেতে উৎপাদিত ঘাস, ভুট্টা, ধানের কুড়া, গমের ভুষি ও মৌসুমি ফল খাওয়ানো হয় এদের। গোয়াল পরিষ্কার, গোসল, ঘাঁস ও খাবার দেওয়ার জন্য নিয়মিত চারজন শ্রমিক রয়েছে। ভাল দাম পেলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে এই জনপ্রতিনিধির।
খামার পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা আব্দুল গাফফার নকিব বলেন, ভোরে উঠেই খেত থেকে ঘাস কাটি। ঘাস নিয়ে বাড়ি ফিরে গোয়াল পরিষ্কার করা এবং গরু গোসল করাই। চারজন মিলে সারাদিন এই গরুর পেছনে খাটি। এখান থেকে যা পাই, তাতেই চলে আমাদের সংসার।
গরু দেখতে আসা কামরুল শিকদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, এলাকায় এত বড় গরু নাই। তাই মাঝে মাঝেই দেখতে আসি। বাইরে থেকেও অনেকে গরু দেখতে আসে। গরুগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে আমাদের।
খামার মালিক ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার হাদিউজ্জামান বলেন, কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল। ২০২২ সালে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রয় করা ১৩টি ষাড় ও তিনটি গাভী নিয়ে নিজের ফার্ম শুরু করি। এবার ১৩টি ষাড় বিক্রি করতে পারব। এর মধ্যে টাইগার, বাংলালিংক ও দয়াল সব থেকে বড়। আমাদের ফার্মের গরু গুলো একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় করা হয়েছে। দেখে শুনে ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। কাউ চাইলে, ক্রয় করে রেখে যেতে পারেন। কোরবানির আগের দিন রাতে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানি উপলক্ষে একদম হালালভাবে আমাদের গরুগুলো লালন পালন করা হয়েছ। নিজেদের খেতে উৎপাদিত ঘাষ, ধানের কুড়া, ভুট্টা এসবই আমাদের গরুর প্রধান খাবার। কোনো প্রকার বাণিজ্যিক খাবার আমাদের গরুকে খাওয়ানো হয়নি। আমাদের নিজেরে স্কেল রয়েছে, কাউ চাইলে লাইভ ওয়েটেও আমাদের গরু ক্রয় করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় ৮ হাজার খামারে ১ লাখ ২ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বেশিরভাগ খামারি ঘরোয়া পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করেন। কোনো খামারি যাতে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য হরমোন না ব্যবহার করে এজন্যও আমরা নজর দারি করা হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।